আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন। আর এ ভোটের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমালা হ্যারিস। আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদের মধ্যে যিনি বিজয়ী হোক দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় যুক্ত করতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। কারণ যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি কমালা হ্যারিস জয়ী হন। তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জয়ী হন। সে ক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান পাবে যুক্তরাষ্ট্র। যিনি ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত এবং এর আগেরবার হেরেছেন পরেরবার আবার নির্বাচিত হয়েছেন।
এ মুহূর্তে শেষ বেলার প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন দুই প্রার্থী। ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় এক প্রচারণা সভায় বলেন, আমি এমনকি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। গত ৬২ দিনের একটি দিন ছুটি নিই নি। যদি এ নির্বাচনে আমরা হেরে যাই, তাহলে সেটির দায় হবে একান্ত আমাদের। তবে যদি আমরা সব নাগরিকের ভোট নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।
অন্যদিকে একই দিন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেনটাউনে এক প্রচারণা সভায় হ্যারিস বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে জনগণের সাড়া দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। বর্তমানে দুই প্রার্থীর মনোযোগ পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে। কমালা হ্যারিস পেনসিলভেনিয়ার বিভিন্ন শহর রীতিমতো চষে বেড়াচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লেডি গাগার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার প্রচারণা সভায়। অন্যদিকে ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে প্রচারণা শেষ করে পেনসিলভেনিয়া এসেছেন। তারপর যাবেন মিশিগানে।
বিভিন্ন জরিপ ও জনমতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছে। উভয় প্রার্থীর দাবি, ভোটার এবং জনমত তাদের পক্ষে রয়েছে। ভূমিধস বিজয় প্রত্যাশা করছেন উভয় প্রার্থী। ভোট পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপের ফলাফল অবশ্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে বেশি যায় নি। বরং বিভিন্ন জরিপের ফলাফল আসন্ন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ‘হাড্ডাহাড্ডি’ লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ টি অঙ্গরাজ্য, যেগুলো স্যুইং স্টেট স্বীকৃতি পেয়েছে সেগুলোর ওপরও নির্ভর করছে যে কে হবে বিজয়ী। কারণ, এ সাত অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিক যে কোনো দলের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে।
অপরদিকে এ নির্বাচন নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কারণ এ মুহূর্তে বিশ্বের বড় তিন সংকট মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন। যেহেতু এখন পৃথিবী জুড়ে এককেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা প্রচলিত এবং সে ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই এ নির্বাচনে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন আগামী চার বছর কার্যত সে প্রার্থীর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন নির্ধারণ করবেন বিশ্বের ভবিষ্যত। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল বিপক্ষে গেলে ট্রাম্প তা মেনে নেবেন কি না সেটি একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন যখন তাকে নির্বাচনে পরাজিত করেছিল। সে সময় তা একেবারে মেনে নিতে পারে নাই ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে কয়েকশ উগ্র ট্রাম্প সমর্থক যে হামলা চালিয়েছিল। সে জন্য ট্রাম্পের উসকানিকে দায়ী করা হয়। আদালতে এ কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। কয়েক মাস আগে অবশ্য এ সংক্রান্ত মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে মার্কিন আদালত। ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন যে নির্বাচনের ফলাফল যা আসুক মেনে নেবেন তিনি।
কয়েক দিন আগে অনলাইনে ভোট শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আট কোটির বেশি মার্কিন ভোটার অনলাইনে তাদের ভোট দিয়েছেন। তবে পেনসিল ভেনিয়ায় এক জনসভায় তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল তিনি এখন মেনে নেননি। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট কারচুপির ইঞ্জিনিয়ার এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন তিনি। এ নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের প্রধান অস্ত্র নারীদের গর্ভপাতের অধিকার আদায় আন্দোলন এবং অভিবাসী ও আরব আমেরিকান মুসলিমরা। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রধান অস্ত্র অভিবাসী সমস্যা ও অর্থনীতি।
এ নির্বাচন মার্কিন ভোটারদের মধ্যে বিভাজনের রেখা আরও গভীর এবং স্পষ্ট করেছে। যা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যায়নি। এমন দু’জন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কখনও এর আগে কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। যারা রাজনৈতিকভাবে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান করেন।