আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের বিজয় ঘোষণা করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয়ি হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় গভীর রাতে ফ্লোরিডায় উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের সামনে ভাষণ দেওয়ার সময় এ ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (৬ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। এ ছাড়া জনতা স্লোগান দেওয়ার পর একপর্যায়ে ট্রাম্প এমন একজনের সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেন যিনি তার প্রচার শিবিরের একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠেছিলেন। আর তিনি হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স এর মালিক এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। এ সময় মাস্ককে রিপাবলিকান পার্টির নতুন তারকা আখ্যায়িত করেন।

            বিবিসি সংবাদ মাধ্যমট বলছে, মধ্যরাতে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় নির্বাচনে নিজের বিজয় ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি হবে আমেরিকার স্বর্ণযুগ। এটি আমেরিকার মানুষের জন্য একটি অসাধারণ বিজয়। যা আবার আমেরিকাকে মহান করতে সাহায্য করবে। ট্রাম্প এ সময় নিজে তার বিজয় ঘোষণা করেন। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পাননি তিনি।

            ফ্লোরিডায় নিজের প্রচার শিবিরের সদর দপ্তরে উত্তেজনায় পূর্ণ জনতাকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা আমাদের একটি অভূতপূর্ব এবং শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। একদিন তারা (দেশের মানুষ) এ দিনের দিকে ফিরে তাকাবে এবং এ দিনটিকে নিজেদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন হিসেবে বিবেচনা করবে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাছ থেকে সিনেটে তার দলের হাতে নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা আমাদের একটি নজির বিহীন এবং শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। এ সময় ট্রাম্প তার স্ত্রী মেলানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে ফার্স্ট লেডি বলে উল্লেখ করেন। তিনি তার বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, তার দেশের এক নম্বর বেস্ট সেলার আছে। তিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। তিনি মানুষকে সাহায্য করার জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত হন তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স, স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার প্রচারণা দলের সদস্যরা। ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি একটি অসাধারণ বিজয় পেয়েছেন।

            যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেভাবে নির্বাচিত হয়: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনি যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হলো ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ইলেক্টোরাল কলেজ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ইলেক্টোরাল কলেজ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন।

            ইলেক্টোরাল কলেজ কী: যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন। বেশিরভাগ হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়ী পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সে অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে যাবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এ দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০ টি বা তার বেশি ভোট পাবেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। সে প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

            কীভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ: প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি করে ইলেক্টোরাল ভোট থাকে। যা এ অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার মোটামুটিভাবে সমানুপাতিক হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে সর্বাধিক ৫৪ টি এবং ভায়োমিং, আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটা (ওয়াশিংটন ডিসি) মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুব কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সে প্রার্থীকে দেয়। যিনি এ অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন। টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন। তাকে এ অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলো সে প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়। তাহলে জয়ী প্রার্থী অতগুলো ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন। মূলত ইলেক্টোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস্ বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়। এরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যে সব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সে সব রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট বেশি। এ প্রথা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি মানুষের ভোটে।

            লাখ লাখ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হতে পারেন কোন প্রার্থী: লাখ লাখ ভোট বেশি পেয়ে অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে মার্কিন নির্বাচনে পরাজিত হতে পারেন যে কোন প্রার্থী। একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়ত কম ভোট পেয়েছেন। কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের থেকে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়ে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে আল গোরকে পরাজিত করেছিলেন। যদিও সাধারণ ভোটে তার জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখের বেশি। মূলত ২০১৬ সালে জনগণের ভোটের নিরিখে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ৪৮.২ শতাংশ ভোট। আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ট্রাম্পের থেকে ২.১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি। তবে বেশি ভোট পেয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাভুটিতে হেরে যান হিলারি। তিনি পেয়েছিলেন ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট, কিন্তু ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪টি ভোট। টেক্সাসের মতো রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি তো বটে, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো সুইং স্টেট তাদের বড় অংকের ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে ট্রাম্পের ঝুলিতে চলে যাওয়ার ফলে হোয়াইট হাউস দখল করা সম্ভব হয়েছিল ট্রাম্পের। অপরদিকে ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে আর মাত্র তিনজন সাধারণ ভোটে না জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সেগুলো উনবিংশ শতাব্দীর ঘটনা। একেক অঙ্গরাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন। যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

খবরটি 2 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen