তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (এফডাব্লিউএ) দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এতে তাদের গ্রাহকরা তার ছাড়া ওয়াইফাই সংযোগ পাবেন। এ উদ্যোগটি হয়তো দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় পরিবর্তন আনবে। কারণ এতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী (আইএসপি) ও টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং গ্রাহকদের সামনে বিকল্প সুযোগ তৈরি হবে। নতুন ফাইভ-জি নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে এফডাব্লিউএ পরিষেবা অনুমোদনসহ অপারেটররা ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাসাবাড়ি ও ব্যবসার মতো নির্দিষ্ট স্থানে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে। এটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার পরিসর আরও বাড়াবে। বিশেষ করে যেসব এলাকাতে তার দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সুযোগ সীমিত। তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করতে এফডাব্লিউএ সাধারণত ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের উচ্চ গতির ক্ষমতা ব্যবহার করে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের টেলিকম অপারেটরগুলো এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি চালু করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এ সেবা সম্প্রসারণে সময় লাগবে। বর্তমানে বাংলাদেশে টেলিকম অপারেটররা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে এবং আইএসপি লাইসেন্সধারীরা ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করে। সাধারণত মোবাইল অপারেটররা থ্রিজি, ফোরজি ও ফাইভ-জির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এ নেটওয়ার্কগুলো স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে ওয়্যারলেস ডেটা ট্রান্সমিশন করতে সক্ষম।
অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড অপারেটররা তার বা ফাইবার অপটিক্সের মতো সংযোগের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করে। তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের তুলনায় বেশি ব্যান্ডউইথ ও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকে। এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা একই ধরনের সেবা দিতে পারবে। এজন্য গ্রাহকদের শুধু সিগনালের জন্য বাইরে একটি অ্যান্টেনা, ভিতরে একটি মডেম বা রাউটার ও অপারেটরের কাছ থেকে সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি ১৩ লাখ, যার মধ্যে ১১ কোটি ৮৪ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক। বাকি ১ কোটি ২৮ লাখ ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী।
ইন্টারনেটের গতি দুর্বল অনলাইনের স্বাভাবিক কাজ করতে বা সার্চ করতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। বিপাকে কয়েক লাখ অনলাইন উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডট) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইন্টারনেটের গতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব কারণে এতে দেশজুড়ে ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। পাশাপাশি কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক গতিতে ইন্টারনেট সেবা মিলছে না। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গতি সাধারণত ১৫ এমবিপিএস পাওয়া যায়। কয়েকটি ফোন থেকে ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষার ওয়েবসাইট ফাস্ট ডটকম ব্যবহার করে ফোরজির গতি পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৫ এমবিপিএস।
ইন্টারনেটের গতি দুর্বল কারণে গ্রাহকের ভোগান্তি শেষ নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) এর দুই নেতৃস্থানীয় সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি কিছু কারিগরি জটিলতার কথা তুলে ধরেন। অধিকাংশ গ্রাহক বন্ধ থাকা সাইটে প্রবেশ করতে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করছেন। এ চ্যানেল ব্যবহার করায় আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের ওপর চাপ বাড়ছে। সবাই ইন্টারনেটের দিকে বেশি ঝুঁকছে এতে ট্রাফিক বেড়ে গেছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপ আসছে। দীর্ঘদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। চালু হওয়ার পর এ ক্যাশ সার্ভারগুলো পূর্ণ হতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। দেশের সবচেয়ে বেশি ডেটা ট্রাফিক হয়ে যে ওয়েবসাইট দিয়ে। সে ফেসবুক একাধিক বড় ক্যাশ সার্ভার বন্ধ। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কমে গেছে। কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করছেন। এসব কারণে গ্রাহক মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে ১১ কোটি ৯৭ লাখ গ্রাহক। ১ কোটি ২১ লাখের বেশি মানুষ ব্যবহার করেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।