আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগ্রাসী ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ২০০ টি হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইরান রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। ইরানের চৌকস ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড ছোড়া মিসাইলের ৯০ শতাংশ নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে আগ্রাসী ইসরায়েলে। এ মিসাইল হামলায় ইসরায়েলি বিভিন্ন সামরিক বিমান ঘাঁটি ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ইরান। এ হামলার অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র অবশ্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইরানের ছোড়া এসব মিসাইল আটকাতে আয়রন ডোমসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। কিন্তু তা সত্ত্বে অনেক মিসাইল সরাসরি আঘাত হেনেছে।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মিসাইলের আঘাতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েল আবার কিছু মিসাইল আটকে দিতে সমর্থ হয়েছে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম। বিবিসি আরও জানিয়েছে, আপাতত যা বোঝা যাচ্ছে ইরান তাদের হামলা সম্পন্ন করেছে। এ মুহূর্তে ইসরায়েলে সতর্কতামূলক আর কোনো সাইরেন বাজতে শোনা যাচ্ছে না। এছাড়া আগ্রাসী ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সাধারণ ইসরায়েলিদের জানিয়েছে, তারা চাইলে এখন বোমা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। এখন নিরাপত্তার আর কোনো ঝুঁকি নেই। ইরানের মিসাইল হামলা শেষ হওয়ার পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসা শুরু করেন সাধারণ মানুষ। এরপর তারা মিসাইল হামলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা শুরু করে।
ইসরায়েলে এক রাতে ২০০ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ২০০ টি হাইপাসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইরান রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এ হামলায় আহত হয়েছে ২ জন ইসরায়েলি। আইডিএফ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের দৈনিক টাইমস অব ইসরায়েল এবং এএফপি। জেরুজালেম থেকে জর্ডান পর্যন্ত শোনা গেছে শব্দ। হামলার আঘাত থেকে বাঁচতে এ রাতের মধ্যে ইসরায়েলের বিভিন্ন বোমা সুরক্ষা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১ কোটি মানুষ। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক, যাদেরকে সে সময় সংবাদ সংগ্রহের জন্য বাইরে লাইভ কাজ করতে হয়েছে, তারাও বোমা সতর্কতার জন্য মাটিতে শুয়ে লাইভ দিয়েছে।
ইরানের ৯০ শতাংশ মিসাইল ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে: ইরানের চৌকস ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড জানিয়েছে, আগ্রাসী ইসরায়েলে ছোড়া মিসাইলের ৯০ শতাংশ নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অভূতপূর্ব মিসাইল হামলা চালায় ইরান। এতে ব্যবহার করা হয় অন্তত ২০০ টি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। বিপ্লবী গার্ডের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, মিসাইল দিয়ে লক্ষ্য করা হয়েছিল আগ্রাসী ইসরায়েলের বিমান ও রাডার ঘাঁটি। এছাড়া হামাস ও হিজবুল্লাহর কমান্ডারদের হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। এদিকে ইরানের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মিসাইলের আঘাতে কোথাও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি বিমান ঘাঁটি ঝাঁঝরা: আগ্রাসী ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এরমধ্যে অন্যতম ছিল নেভাতিম বিমান ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন হামলার ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, নেভাতিম ঘাঁটিতে অন্তত কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছে ইরান। যেগুলো একের পর এক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে দেখা গেছে। সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, তারা যে দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে সেগুলোর মধ্যে একটি ধারণ করা হয়েছে আরাত আন-নাকাব শহর থেকে। এটি বিমান ঘাঁটির ঠিক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। ভিডিওতে যেসব ভবন দেখা গেছে সেগুলোর সঙ্গে পুরোনো ছবির সাদৃশ্যতা খুঁজে পেয়ে সিএনএন নিশ্চিত করেছে। আকাশের উপর দিকে ধরা রাখা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কয়েক ডজন মিসাইল এ ঘাঁটির উপর পড়ছে। এ সময় সেখানে সাইরেন বাজছিল।
এ সময় আরও দেখা যায়, মিসাইল ঠেকানোর একটি প্রতিরোধী মিসাইল ব্যাটারি থেকে ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ঘাঁটির কন্ট্রোল টাওয়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল। ঠিক তখন ঘাঁটিতে মিসাইল পড়তে থাকে এবং সেগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। এরপর এ ঘাঁটি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হওয়া শুরু করে। তখনও ঘাঁটিতে একের পর এক মিসাইল পড়তে ও বিস্ফোরিত হতে থাকে। তবে ঘাঁটির কোন কোন অবকাঠামো লক্ষ্য করে এতগুলো মিসাইল ছোড়া হয়েছে সেটি রাতের অন্ধকারে বোঝা যায়নি তা জানিয়েছে সিএনএন। তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পায়নি। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল দখলদার ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়েছিল ইরান। সেবার নেভাতিম নামের এ সামরিক বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। তবে এ সময় ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছিল।
গত সপ্তাহ থেকে লেবাননে ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান হামলা অভিযান শুরু করেছে ইরান। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে স্থল বাহিনীর অভিযান। সে অভিযানের জবাব হিসেবে ইরান গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে হাইপাসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকির মধ্যে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা করে ইরান। বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টা ৩০ মিনিটের পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় বারের মতো সরাসরি মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের মিসাইল হামলার মধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছে আগ্রাসী ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি, সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল