আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রেশ কেটে যাওয়ার আগে লেবাননে নতুন উদ্যমে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। এর আগে ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের ২৮ টি গ্রামের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইডিএফ। এর পর আগ্রাসী ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে লেবাননে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই টুইটারে দক্ষিণ লেবানের ২৮ গ্রামের বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয় আইডিএফ।
লেবাননে ৪০০ মিটার ঢুকে পিছু হটেছে ইসরায়েলি সেনারা: সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল হামলা চালাতে লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে আগ্রাসী ইসরায়েলের বেশ কিছু সেনা। তারা মাত্র ৪০০ মিটার যাওয়ার পর আবার পিছু হটেছে। লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলেছে,“ইসরায়েলি শত্রুদের একটি দল খিরবেত ইয়ারুন এবং আয়েদেস এলাকা দিয়ে ব্লু লাইন পার হয়ে লেবাননের প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা আবার পিছু হটেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, লেবাননের ভেতর ঢোকার চেষ্টাকালে হিজবুল্লাহর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল ইসরায়েলি সেনারা। এরমধ্যে ওদাইসে শহরে ২ সেনা নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। আহত এ সেনাদের হেলিকপ্টারে হাইফার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করছিল। এছাড়া একই সময় ওই এলাকার তিনটি হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সীমান্তে হিজবুল্লাহর কঠোর প্রতিরোধ, বহু ইসরায়েলি সেনা হতাহত: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়েছে আগ্রাসী ইসরায়েলের সেনারা। হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ৮ সেনা নিহত হয়। তাদের বহু সেনা হতাহত হয়ে।
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সীমান্তে ইসরায়েলের গোলানি ব্রিগেডের সেনাদের ওপর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে হিজবুল্লাহ। যা স্থল হামলায় নিয়োজিত ইসরায়েলের অন্যতম একটি চৌকস ব্রিগেড। অনেক আহত এবং নিহত সেনাকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে উত্তর ইসরায়েলের হায়ফার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়ে। স্থল হামলা চালাতে গিয়ে বাস্তবতা টের পাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া প্রত্যেক ইসরায়েলি সেনা এটি জানে হামাস আর হিজবুল্লাহ এক নয়। হিজবুল্লাহ হামাসের যে অনেক শক্তিশালী এবং লড়াই করার প্রশিক্ষিত বাহিনী। এদিকে প্রথম বারের মতো লেবাননের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করে ইসরায়েলি সেনারা। তারা ভেবেছিল গাজার মতো লেবাননে সহজে ঢুকে যেতে পারবে। কিন্তু প্রথম দিন হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের হাতে হতাহতের শিকার হয় ইসরায়েলি সেনারা।
হিজবুল্লাহ বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র ইসলমি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ইরানের প্রত্যক্ষ মদতে প্রতিষ্ঠিত এ গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের ওপারে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এ দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হিজবুল্লার সদরদপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর অবস্থান। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত দশকগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে ছোটো-খাটো সংঘাত চলেছে। তবে তা বড় আকার নিয়েছে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবরের পর।
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের অতর্কিত হামলা চালায় এবং ২৪২ জন জিম্মিকে ধরে নিয়ে যায়। সে হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে এ দিন থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ, এর পালটা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিমান বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ গোষ্ঠীটির বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এক কথায়, গত দু’সপ্তাহে হিজবুল্লাহর শীর্ষ চেইন অব কমান্ড ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েল।
সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা, টাইম অব ইসরায়েল