আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে রাশিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। এরপর তালেবান সরকারের একটি প্রতিনিধিদল ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছেছে। তালেবান প্রতিনিধি দল ২০২২ সালে প্রথম সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে যায়। তখন এ নিয়ে কেবল রাশিয়া নয়, পুরো বিশ্বে অনেক আলোচনা হয়েছিল। রাশিয়ার পররাষ্ট্র ও বিচার মন্ত্রণালয়ের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় এবারের সফর আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। তালেবান এবং আফগানিস্তানের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এ পদক্ষেপটি প্রয়োজনীয় ছিল মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এদিকে সেন্ট পিটার্সবার্গে এমন সব তালেবান প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই।

            কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্ট এর মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ হান্স জ্যাকব শিন্ডলার মনে করেন, তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিনিময়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু সেটা এতটা সহজ নাও হতে পারে। বাড়তি ছাড় নিতে সব সময় তালেবান খুব ইচ্ছুক, কিন্তু প্রতিদান দেওয়ার বিষয় এলে সেটা জটিল হয়ে যায়। এর প্রতিদানে কোনো কিছু আশা না করে এমন ঘোষণা করা হলে একটি ‘কূটনৈতিক অস্থিরতা’ তৈরি হবে। চাইলে কারো পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে তালিকাভুক্ত কোনো সংগঠনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কোনও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব না। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য রাশিয়া খুব হিসাব করে এগোচ্ছে এবং এর ঝুঁকিও বিবেচনায় রাখছে বলে মনে করেন এই কূটনীতি বিশেষজ্ঞ।

            আফগানিস্তান অ্যানালিসিস নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টমাস রুটিশ ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ধাপে ধাপে এগোনোর কৌশল হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। রাশিয়া তালেবানের সরকারি স্বীকৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যতক্ষণ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তালেবানকে তার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখছে, ততক্ষণ রাশিয়া তালেবানকে তার সন্ত্রাসের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে কিনা এটা খুব কম গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকা মেনে চলা রাশিয়ার জন্য আইনত বাধ্যতামূলক।

            ২০১৫ সাল থেকে তালেবানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রেখেছে মস্কো। সংগঠনটির কাছে রাশিয়া অতীতে অস্ত্র সরবরাহ করেছে সন্দেহ করা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়া আফগান সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান। ২০ বছর পর আফগান সরকারকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া পশ্চিমা সামরিক বাহিনী এবং কূটনীতিকেরা দ্রুত আফগানিস্তান ছেড়ে যান। এর ছয় মাস পর ২০২২ সালের মার্চে তালেবান ও রাশিয়া আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর কোনো রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ২০২৩ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে তালেবানের নাম সরিয়ে দেয় কাজাখস্তান। রাশিয়া অর্থনৈতিক ফোরামে একই পথ অনুসরণ করতে পারে।

খবরটি 420 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen