পুষ্পেন চৌধুরী, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের উত্তর হরিণা এলাকার ওঝা পাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আসহাব মিয়া। চরম দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে ২০০৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। একটি ছোট টিনের ঘরে কোন রকমে তিন সন্তানকে নিয়ে চরম দুঃখ কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতেন মৃত আসহাব মিয়ার স্ত্রী মাবিয়া খাতুন। প্রায় দুই বছর পূর্বে মাবিয়া খাতুনের ঘরটি ভেঙে উপজেলা প্রশাসন তাকে একটি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ’বীর নিবাস’ তৈরী করার উদ্যোগ নেন। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় ঠিকাদারকে কাজটি শুরু করার নির্দেশও প্রদান করেন। যদিও মাবিয়া খাতুনের নামে কোন বীর নিবাস মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়নি। লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন জনৈক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দকৃত বীর নিবাসটি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাবিয়া খাতুনের নামে প্রস্তাবনা করেন। কিন্তু নাম নিয়ে বিভ্রান্তির কারনে মাবিয়া খাতুনের বীর নিবাসটির আর্থিক বরাদ্দ আজ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেয়ায় বাড়িটি অর্ধসমাপ্ত করে ঠিকাদার দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের শুরুতে লোহাগাড়া উপজেলায় ১১ টি বীর নিবাস তৈরীর সরকারী অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে মাবিয়া খাতুনের নামে কোন ঘর বরাদ্দ ছিলনা। কিন্তু লোহাগাড়া উপজেলা বীর নিবাস প্রকল্পের উপকারভোগী নির্বাচন কমিটি জনৈক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর শুক্কুরের পরিবর্তে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাবিয়া খাতুনের নামে একটি বীর নিবাস বরাদ্দ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। কিন্তু গত দুই বছরেও তা প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আসহাব মিয়ার সহযোদ্ধা লোহাগাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হামিদ বেঙ্গল বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসহাব উদ্দিন ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ভারত চলে যান। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ১ নং সেক্টরের অধীনে ফেনী, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আসহাব মিয়া ছিলেন খুবই অসচ্ছল ছিলেন। আমরা আশা করবো, তাঁর স্ত্রীর নামে বীর নিবাসটি দ্রুত আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে কাজটি যেন সম্পন্ন হয়।
এ ব্যাপারে মাবিয়া খাতুন বলেন, বীর নিবাসটি পেয়ে খুব খুশী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভাড়া বাড়ীতে তিন সন্তান নিয়ে চরম দূর্ভোগে আছি।
ঠিকাদার কবীর আহমদ বলেন, ২০২১ সালে লোহাগাড়া উপজেলায় ১১ টি বীর নিবাস বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পাই। কিন্তু মাবিয়া খাতুনের নামে বীর নিবাসটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় এবং আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়ায় আমি কাজটি বন্ধ রেখেছি।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাহাবুব আলম শাওন ভূইয়া বলেন, বীর নিবাস প্রকল্পের উপকারভোগী নির্বাচন কমিটি একজন স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে মাবিয়া খাতুনের নামটি প্রেরণ করলেও তা মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অনুমোদন হয়ে না আসায় মাবিয়া খাতুনের বীর নিবাসটি অর্ধসমাপ্ত করে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইনামুল হাসান বলেন, একজন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাসটির কাজ কি কারনে বন্ধ রয়েছে তা তদন্ত করে দেখবো। বীর নিবাসটির কাজ যাতে দ্রুত সময়ে শেষ করতে পারি, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।