আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বৈশ্বিক দাবিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া সর্বশেষ দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড। ইউরোপের তিন দেশের এ সিদ্ধান্ত পশ্চিমা শক্তিগুলোর ফিলিস্তিনিরা কেবল ইসরায়েলের সাথে শান্তি আলোচনার অংশ হিসাবে রাষ্ট্রত্ব পেতে পারে এ ধরনের দীর্ঘদিনের যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তা ভেঙে দিয়েছে। নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার এ পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। গাজায় নির্বিচারে ইসরায়েলি হামলা ও বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু ইউরোপে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করেছে। মাল্টা ও স্লোভেনিয়া সঠিক পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়টি আর ফ্রান্সের জন্য নিষিদ্ধ নয় এটা সঠিক মুহূর্তে করা হবে। জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা ১৪৫ টিতে দাঁড়িয়েছে। আর বাংলাদেশ ১৬ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। অপরদিকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া জাতিসংঘের সদ রাষ্ট্র নয় সাহরাভি আরব গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও ভ্যাটিকান সিটি ২ টি দেশ রয়েছে। আর এসব দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকান এবং এশিয়ান দেশ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। গত এপ্রিলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্র ঘোষণার এক পদক্ষেপে ভেটো দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা:১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন ইয়াসির আরাফাত। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা বা গণঅভ্যুত্থানের সময় ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। আলজিয়ার্সে নির্বাসিত ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন তিনি। এ বৈঠকে স্বাধীন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র পাশাপাশি বিদ্যমান থাকবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে ঘোষণার লক্ষ্য হিসাবে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে মেনে নেন পরিষদের নেতারা। ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় আলজেরিয়া। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরব বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, ভারত, তুরস্ক, আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বেশ কয়েকটি মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশসহ আরও কয়েক ডজন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১০ সালের শেষের এবং ২০১১ সালের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ঘিরে শুরু হওয়া সংকটের সময় আর অনেক দেশ একের পর এক ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের দাবির প্রতি সমর্থনের আহ্বানে সাড়া দেয়।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি: ২০১১ সালে শান্তি আলোচনা স্থগিত হওয়ার সাথে ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পাওয়ার প্রচেষ্টা পুরোদমে শুরু করে। কিন্তু এ সময় তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ বছরের ৩১ অক্টোবর যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ সদস্য হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে ভোট দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের এ সংস্থায় অর্থায়ন স্থগিত করে। ২০১৮ সালে ইউনেস্কো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। পরে গত বছর পুনরায় ইউনেস্কোতে যোগ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে প্রথম বারের মতো ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর তিন বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে মেনে নেয়।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে হামলা চালায় গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাসের শত শত যোদ্ধা। এ দিন ইসরায়েলে এক হাজার ১৭০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাসের সদস্যরা। এ সময় ২৫২ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস। যাদের মধ্যে এখন ১২১ জন গাজায় জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। পরে এ দিন গাজা উপত্যকায় ব্যাপক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিন ৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে।