আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান নেতা ঈসমাইল হানিয়ার তিন ছেলে নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় তার নাতি নাতনি প্রাণ হারিয়েছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা সাবাব নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, হানিয়ার ছেলেদের লক্ষ্য করে, আজ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন গাজার উত্তরপূর্বাঞ্চলের শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। ছেলে ও নাতি নাতনিদের মৃত্যুর বিষয়টি আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন হানিয়া নিজে।

            সংবাদ মাধ্যমটিকে এক সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা ঈসমাইল হানিয়ার জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় কয়েকজন নাতি নাতনিসহ তার তিন ছেলে হাজেম, আমির এবং মোহাম্মদ প্রাণ হারিয়েছে। সন্তানদের মৃত্যুতে বিচলিত হননি হামাস প্রধান। আলজাজিরাকে তিনি বলেছেন, শহীদদের রক্ত এবং আহতদের যন্ত্রণার মাধ্যমে আমরা আশা তৈরি করি, আমরা ভবিষ্যৎ তৈরি করি, আমরা আমাদের মানুষ ও জাতির জন্য স্বাধীনতা ও মুক্তি তৈরি করি। তিনি আরও জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়েছিলেন তার ছেলেরা। এ সময় হামলা চালানো হয়। হামাস প্রধান দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, নেতাদের বাড়িঘর ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে হামাসকে থামানো যাবে না। কোনো সন্দেহ নেই এ শত্রুরা প্রতিশোধ, হত্যা এবং রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং তারা কোনো আইন মানেনা। চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তার পরিবারের ৬০ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামাস প্রধান আরও জানিয়েছেন, তার ছেলেদের হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে না এবং হামাস যুদ্ধ বিরতির দাবি থেকে একটু সরে আসবে না। যদি তারা মনে করে আমাদের সন্তানদের লক্ষ্য করার মাধ্যমে এ মুহূর্তে হামাসের অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে, তাহলে তারা ভ্রান্তিতে আছে। ফিলিস্তিনের সন্তানদের চেয়ে আমার সন্তানদের রক্তের মূল্য বেশি নয়। ফিলিস্তিনের সকল শহীদ আমার সন্তান।

            গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আল শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে হানিয়ার ছেলেরা নিহত হয়েছেন। সেখানে বেসামরিকদের বহনকারী একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান থেকে হামলা চালানো হয়। ঈসমাইল হানিয়ার পরিবার পরিজন গাজাতে থাকলে নিরাপত্তার কারণে তিনি কাতারে বসবাস করেন। সেখান থেকে দলটির সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি।

            গত বছর (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটির নেতারা এ যুদ্ধের নাম দিয়েছেন অপরেশেন আল-আকসা ফ্লাড। ইসরায়েলের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন গাজায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন ছাড়িয়ে। এ হামলায় নিহতদের মধ্যে ৮ শতাধিক ইসরায়েলের এবং ৫৬০ জন ফিলিস্তিন। এ ছাড়া জিম্মি করা হয়েছে ১২০ জনের বেশি ইসরায়েলি। এ ঘটনায় ইসরায়েলের নাগরিকদের পাশাপাশি আরও অন্তত ১০ টি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক হত্যা ও অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ার‌ল্যান্ড, মেক্সিকো, ব্রাজিল, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং ইউক্রেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগে ৩ হাজারের বেশি রকেট ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে। এ সময়ে হ্যাং গ্লাইডার ও মোটর চালিত গ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি এ কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে আরও কয়েক শ’ হামাস যোদ্ধা, শুরু হয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধ।

সূত্র: আলজাজিরা

খবরটি 529 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen