আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্য-আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে রুয়ান্ডা সমর্থিত দেশটির জাতিগত তুতসি নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩। সোমবার বিদ্রোহীরা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় সেখানে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে কয়েক হাজার মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছে এবং বিভিন্ন কারাগারে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েক হাজার কারাবন্দি পালিয়েছে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কঙ্গোতে অভিযান বন্ধ করতে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গোমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে গোষ্ঠীটি। রুয়ান্ডার সৈন্যদের সঙ্গে সীমান্তে কঙ্গোর সৈন্য গোলাগুলির ঘটনার মাঝে শহরটি দখলের দাবি করেছে এম২৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কঙ্গোর সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুয়ায়া গোমায় রুয়ান্ডার সেনাবাহিনীর উপস্থিতির তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্যাট্রিক মুয়ায়া বলেছেন, সরকার হত্যাযজ্ঞ ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কাজ করে চলেছে। বাসিন্দাদের বাড়িঘরে অবস্থান এবং ভাঙচুর ও লুটপাট করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ কঙ্গোতে হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্যে সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করে গোমায় নিজ সৈন্য পাঠিয়েছে এ দাবি করেছে কঙ্গোর সরকার। এম২৩ গোষ্ঠীর যোদ্ধারা গোমা শহর দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এম২৩ গোষ্ঠীর এমন পদক্ষেপকে কঙ্গোর সরকার রুয়ান্ডার ‘‘যুদ্ধ ঘোষণা’’ এটি অভিহিত করেছিল। কঙ্গোর সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম২৩। সে সময়সীমার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট আগে গোমা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে এম২৩। এ গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা গোমার বাসিন্দাদের শান্ত থাকার এবং কঙ্গোর সৈন্যদের সেখানকার কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কঙ্গোতে কী ঘটছে: দীর্ঘদিন ধরে রুয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে কঙ্গোর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘাত চলছে। এ গোষ্ঠীর সদস্যরা একের পর এক শহরে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। জাতিগত তুতসি নেতৃত্বাধীন এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমার বেশিরভাগ অংশ দখলে নিয়েছে। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমা দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোনা, টিন এবং কোল্টানের মতো তুমুল চাহিদার ধাতু ও খনিজ সরবরাহকারী খনির শহরগুলোর সঙ্গে শহরটির যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
এম২৩ কারা: ২০১২ সালে কঙ্গোর একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শাখা হিসাবে গঠিত হয় এম২৩। ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের তুতসি জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা করার জন্য এ গোষ্ঠীটি গঠন করা হয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে এ অভিযোগ করেন। পরে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে এ গোষ্ঠীর তৎপরতা দমন করে। এমনকি গোষ্ঠীটির কয়েক হাজার সদস্য পালিয়ে প্রতিবেশি রুয়ান্ডায় আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে আবার হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এম২৩ বিদ্রোহীরা।
রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ: এম২৩ বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে রুয়ান্ডা। যদিও রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করে না। গত বছর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুয়ান্ডার ৪ হাজার সৈন্য কঙ্গোতে প্রবেশ করেছে এবং এ সৈন্যরা এম২৩ গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে। রুয়ান্ডার সরকার এক বিবৃতি দিলে এম২৩ গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থনের অভিযোগের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেনি। সীমান্তের পার্শ্ববর্তী এ সংঘাত রুয়ান্ডার সুরক্ষা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য গুরুতর হুমকি।
কঙ্গোতে কতদিন ধরে সংঘাত: ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার পর থেকে দেশটির খনিজ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির বিশাল খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। কঙ্গোর এ অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এমনকি এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে ১৯৯০ এর দশকে ‘‘আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ’’ হিসেবে অভিহিত দুটি সংঘাতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
সংঘাতে অন্য কেউ জড়িত: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা এম২৩ গোষ্ঠীর অভিযান ঠেকাতে কঙ্গোলিজ সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ডিআর কঙ্গো থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের প্রত্যাহার স্থগিত করা হয়েছে। আফ্রিকার ১৬ টি দেশের আঞ্চলিক জোট সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। যদি এ জোট বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারেনি। গোমায় বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়া ঠেকানোর সময় তাদের অন্তত ৯ সৈন্য নিহত হয়েছে। এ সংঘাতে মালাবি ৩ সৈন্য নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী বলেছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত উরুগুয়ের ১ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।