স্টাফ রিপোর্টার: পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন পার্বত্য জেরায় পিসিজেএসএস পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ তম দিবসে গণসমাবেশ আয়োজন বরে। রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে শান্তি চুক্তির ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করুন, এ শ্লোগান সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে।
এ সময় উষাতন তালুকদার বলেন, আলাপ আলোচনার পর ১৯৯৭ সনের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সব সরকারের উচিত চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা, কিন্তু ২৭ বছরে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা অনেক লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, আমরা ভূমি অধিকার ফিরে পেতে চাই।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সুশীল বিকাশ চাকমা। এ সময় প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার। আরো উপস্থিত ছিলেন অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে বান্দরবান শহরের রাজার মাঠেএক বিশাল গণসমাবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে শহরের রাজার মাঠে গণসমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ গণসমাবেশ করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মামলা হামলার কারণে দীর্ঘ ৯ বছর এ ধরনের কোন সভা-সমাবেশে করতে পারেনি এ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পিসিজেএসএস। সমাবেশে জেলার ৭ টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র জনতা মিছিল ও সমাবেশে যোগ দেয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী সরকারের মামলা হামলার কারণে আমরা দীর্ঘ ৯ বছর সভা সমাবেশ করতে পারিনি। তাই রাজার মাঠে আমরা মনের কথা বলতে এসেছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি গুরুত্বের কারণে সরকারিভাবে চুক্তির বর্ষপূর্তি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। পাহাড়ে যতগুলো উপ-গ্রুপ রয়েছে, তাদের প্রতি বিশেষ সমর্থন প্রত্যাহার হলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কারণ জনগণের প্রয়োজনে উপ-গ্রুপগুলো সৃষ্টি হয়নি। তাই বিশেষ সমর্থন থাকায় এ গ্রুপগুলো টিকে থাকার কথা না মনে করেন বক্তারা।
এ গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুমন মারমা। এ সভায় প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, মিঞোচিং মারমা ও পিসিজেএসএস নেতাকর্মী বৃন্দ।
অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। রোববার বিকাল ৩ টায় জেলা সদরের মহাজন পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন। পরে জেলা আদালতের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর বিগত ২৭ বছর ধরে সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে কালক্ষেপণ করেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আর কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। মানুষ আশা করেছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক হবে। কিন্তু সে রকম কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পাহাড়ে জুম্ম জনগণ চুক্তির পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাবে এ সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এ সময় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করে শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান। অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির সব কটি মৌলিক ধারা বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ জানান।
এ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি সুনেন্টু চাকমা, যুব সমিতির দীঘিনালা থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েল চাকমা, পিসিপির সাবেক নেতা রাজ্যময় চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী মায়া চৌধুরী, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্ঞানপ্রিয় চাকমা।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হলে এখনো পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। এখনো পাহাড়ে চাঁদাবাজি, খুন, গুম, হত্যা এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পাহাড়কে উৎকন্ঠিত করে রাখছে। এ চুক্তির পরে বিগত ২৭ বছরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস’ ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও তার সশস্ত্র গ্রুপ, মগ পার্টি ও তার সশস্ত্র গ্রুপ মগ লিবারেশন আর্মি (এমএলএ)। এছাড়া সর্বশেষ বিছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও তার সশস্ত্র সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ টি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এ গ্রুপগুলো বিগত ২৭ বছরে ঘটিয়েছে কয়েক শতাধিক হত্যাকান্ড, অপহরণ ও চাঁদাবাজী ঘটনা। আর এ চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান নিয়ে এখনো সভা-সমাবেশে ব্যস্ত রয়েছে পাহাড়ী ও বাঙ্গালী সংগঠনগুলো। পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ সরকারের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি।