স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে সংবাদিক সংগঠন বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবন অবৈধভাবে বেদখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ও মৌজার হেডম্যান বাশৈচিং মারমা বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় সন্ত্রাসীদের সহায়তা নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবন লেখা মুছে ফেলা, সাইনবোর্ড দিয়ে অবৈধভাবে বেদখলে যাওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোরপূর্বকভাবে এ ভবন বেদখল করে কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) অবৈধভাবে এ ভবন বেদখলের অভিযোগে বাশৈচিং মারমা ও পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করা হয়েছে। সংবাদিক সংগঠন বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবন অবৈধভাবে বেদখলের অভিযোগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে মামলা দায়ের করেছে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি কমিটির সভাপতি মংসানু মারমা ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চাকমা। এ মামলার মিস-সিআর মামলা নম্বর ৬০/২০২৪, বান্দরবান সদর। এ মামলার বিবাদীগণ বাশৈচিং মারমা, তার স্ত্রী মেথুই চিং মারমা, ছেলে শৈসাইচিং মারমা, মেয়ে শৈমে মারমা, মেয়ের জামাই সিংমং মারমা, ছেলে লেনিন মারমা ও সন্ত্রাসী ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাত নামা রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি বাদী ১ম পক্ষ ও তার পক্ষে নিযুক্ত বিজ্ঞ কৌশুলী মাধ্যমে আদালত অবগত হয়। গত ০৯/০৯/২০২৪ খ্রি: তারিখে বাশৈচিং মারমা ২য় পক্ষসহ অজ্ঞাত নামা আরো ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে নিম্ন তফসিলোক্ত ০.০৫ (পাচঁ শতক) জমি দখল করার চেষ্টা করে। এ ১ম পক্ষের বক্তব্য ও দাখিলকৃত কাগজপত্র দেখে উভয় পক্ষের মধ্যে এ জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে এবং বিরোধীয় ভূমিতে শান্তিভঙ্গের আশংকা রয়েছে। এমতাবস্থায় তফসিল বর্ণিত জমিতে ২য় পক্ষগণ আগামী ১৫/১০/২০২৪ খ্রি: তারিখে কারণ দর্শানোর জবাব ও প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ প্রদান করে আদালত। আপরদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তফসিল বর্ণিত নালিশী ভূমি সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আদেশ প্রদান করে। একই সাথে বান্দরবান সদর থানার অফিসার-ইন-চার্জ তফসিল বর্ণিত নালিশী ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আদালত নির্দেশ প্রদান করে।
জানা যায়, বান্দরবান জেলায় কর্মরত পাহাড়ী সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ২০১০ খ্রি: বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি সংবাদিক সংগঠন আত্নপ্রকাশ করে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করে। এর পরবর্তী সময়ে কমিটি অফিস ভবন নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়। এ কমিটির উদ্যোগে জেলা পরিষদের অনুদান ও আর্থীক সহায়তায় উজানী পাড়া এলাকায় বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে জমি ক্রয় করা হয়। ২০১১ খ্রি: বান্দরবান সদরে উজানী পাড়া এলাকায় ৩১৩ নং বান্দরবান মৌজা, দাগ নং ২৪২৯, মূলে ০.০৫ (পাচঁ শতক) জমি ক্রয় সূত্রে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা হয় বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি। এ জায়গা ক্রয়ের পর বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি অফিস ব্যবহারের জন্য একটি টিনসেড কাঁচা বেড়া ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপরে ২০১২ সালে অফিস ঘরের একাংশ সোনাধন কর্মকার দোকানদারকে ভাড়া দেওয়া হয়। এর পরবর্তী সময়ে ২০১৪ খ্রি: বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিস টিনসেড কাঁচা বেড়া ঘরসহ জমি ক্রয়ের মূলে মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে বেদখল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস। এ ঘটনার পর উভয় পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পরিহার করে জেএসএস বিরুদ্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে মামলা করে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমন পরিস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণ নাশের আশঙ্কায় আইনের আশ্রয় ও সহায়তার গ্রহন করে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি। এ মামলায় জায়গার নথিপত্র ও তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন সঠিক থাকায় অনেক বছর পর বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে রায় দেয় ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। অপরদিকে জেএসএস সাথে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটির মামলা চলমান অবস্থায় কমিটির উদ্যোগে জেলা পরিষদের অনুদান ও আর্থীক সহায়তায় টিনসেড সেমিপাকা অফিস ভবন নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। এমতবস্থায় বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবন নির্মাণে অসমাপ্ত কাজের অংশ ধারাবাহিক কাজ চলমান রয়েছে। এরপর ২০২৪ খ্রি: গত ৫ আগষ্ট তারিখে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে এ সুযোগে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন অবৈধভাবে বেদখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ও মৌজার হেডম্যান বাশৈচিং মারমা।
বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি কমিটির সভাপতি মংসানু মারমা জানান, ২০১১ খ্রি: বান্দরবান সদর উজানী পাড়া এলাকায় ৩১৩ নং বান্দরবান মৌজা, দাগ নং- ২৪২৯, মূলে ০.০৫ (পাচঁ শতক) জায়গার ক্রয় সূত্রে মালিকানা বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি টিনসেড সেমিপাকা ভবন স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় কয়েক বছর ধরে জেলা পরিষদের অনুদান ও আর্থীক সহায়তায় বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি অফিস টিনসেড সেমিপাকা ভবন নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ চলমান আছে। এমতাবস্থায় হঠাৎ একদিন গত ৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিট ভবন সন্ত্রাসীদের সহায়তায় জোরপূর্বক অবৈধভাবে বেদখল করে বাশৈচিং ও তার পরিবার। এ অবৈধভাবে বেদখল কাজে বাধা দিলে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে। এ ঘটনার পর উভয় পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পরিহার করে আইনের আশ্রয় ও সহায়তার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামালা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এর কয়েক বছর আগে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটি এ জায়গা নিয়ে জেএসএস সাথে মামলা লড়তে হয়েছে। এ জায়গার নথিপত্র ও তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন সঠিক থাকায় শেষ পর্যায়ে বান্দরবান রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে এ মামলায় রায় দিয়েছে আদালত।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাশৈচিং জানান, জোরপূর্বক কারো জায়গা দখল করি নাই। যে কেউ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার নাম ব্যবহার করে এ ধরনের অবৈধভাবে বেদখলের কাজ করতে পারে। শুনেছি মামলা হয়েছে। এ মামলা বিষয়ে আদালতে আইনগত প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে।
বান্দরবান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল বলেন, এ মামলা বিষয়ে জেনেছি। আদালতের নির্দেশনা পেলে তদন্ত করা হবে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।