বিশেষ খবর ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার সংকট দূর করা হবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কোয়ালিটি এডুকেশন গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্যবাসীর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। খাগড়াছড়িতে আমরা ইংলিশ কারিকুলাম স্কুল গড়ে তুলব। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবন অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবীর মানুষ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা সময় সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তিন পার্বত্য জেলা ও রাজধানীতে বসবাসরত পার্বত্য আদিবাসী সরকারি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
পার্বত্য উপদেষ্টা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার সংকট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ছাত্রদের জন্য চারটি হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটির রাজস্থলিতে একটি হোস্টেলের কাজ চলছে। প্রয়োজনে ছাত্রদের জন্য আরও হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে না তাদের বাংলা ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে আমাদের পাহাড়ি ছেলে-মেয়েরা আর্মি স্কুলে পড়ে। আর্মি স্কুলে পড়াশোনার মান অত্যন্ত ভালো। ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পাহাড়ি ছেলে-মেয়েদের এ সব স্কুলে পড়াশুনা করতে হবে। সুশাসন গড়ে তোলার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। এ জেলা পরিষদে নারী সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যেক জেলায় দুইজন করে ছাত্র রিপ্রেজেন্টেটিভ রাখা হবে এবং সব ক্ষেত্রে নিউট্রালিটি বজায় রাখা হবে।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরো বলেন, পার্বত্যবাসীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পার্বত্য তিন জেলায় লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সব কাজ আমরা করব। পার্বত্য অঞ্চলের মাটিতে অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম ও ইক্ষুর চাষ বাড়ানো হবে। পরিবেশ রক্ষায় বাঁশ ও ইক্ষু চাষের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। পার্বত্য তিন জেলায় কমিউনিটি বেইজড সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। পরিবেশ রক্ষা ও পানির উৎস বাড়াতে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় নদী, নালা, ঝিরিগুলোর পানির প্রবাহ ঠিক করা হবে। আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, লিচু গাছসহ নানা প্রকার ফলদ গাছ রোপণ করা হবে। খাগড়াছড়িতে একটি নার্সিং কলেজ এবং বিলাইছড়িতে একটি কলেজ গড়ে তোলা হবে। গর্ভবতী নারী ও শিশু চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তিন পার্বত্য জেলার জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হবে।
এ মতবিনিময় সভায় আদিবাসী প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাবিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানান। মাতৃভাষা শিক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা কমিটি, ভিলেজ কমন ফরেস্ট, মডেল প্যাগোডা বা বিহার নির্মাণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, নারীদের সকল প্রকার উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দুর্গম এলাকার নারী ও শিশুদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা, নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন, আদিবাসী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, পানির উৎস সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা, পানির সংকট নিরসন, পার্বত্য এলাকায় বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো থেকে সহায়তা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এ মতবিনিময় সভায় সবাই যার যার নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ উপদেষ্টাকে সহায়তা করবেন এ আশ্বস্ত প্রদান করেন। সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে তা সবাই মত প্রকাশ করেন।
এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নন্দিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব কংকন চাকমা, পার্বত্যবাসী প্রতিনিধিদের মধ্যে উৎপল দেওয়ান, প্রতুল দেওয়ান, কীর্তি নিশান চাকমা, বিপ্লব চাকমা, ক্রাজাই চৌধুরী, যতন বড়ুয়া, ইলিরা দেওয়ান, ইলা চৌধুরী, নিকোলাস চাকমা, ফাল্গুনি ত্রিপুরা, হ্লা মং প্রু, ডা. উবানু মারমা, পূর্ণলেখা চাকমা, সুবল কান্তি চাকমা, পূণ্য বর্ধন চাকমা, রনি বম, লালস্টানলিয়ান পাংখোয়া, মিল্টন চাকমা, জুলিয়ান বম।