আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে তার পক্ষে। এর আগে টানা তিন দিন ধরে দেশটিতে ভোটগ্রহণ চলে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে পুতিনের আরও ৬ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত হলো। আর এ ফলাফলের অর্থ হলো ৭১ বছর বয়সী পুতিন ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের দিক থেকে জোসেফ স্টালিনকে ছাড়িয়ে যাবেন এবং গত ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা হয়ে উঠবেন। সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। নিজের প্রচারণা সদর দপ্তর থেকে পুতিন এক ভাষণে বলেন, কে বা কতটা তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়, কে বা কতটা তারা আমাদের দমন করতে চায়, আমাদের সংকল্প, আমাদের চেতনা ইতিহাসে কেউ এমন কিছুতে সফল হতে পারেনি। তার ভাষায়, এটি (পশ্চিমাদের এ কৌশল) এখনও কাজ করছে না এবং ভবিষ্যতে কাজ করবে না। কখনোই না।
আল জাজিরা প্রতিবেদনে বলছে, ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রাথমিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যায় পুতিন তার চলমান শাসন আরও ছয় বছরের জন্য বাড়িয়ে নেবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে বিশাল জয়ের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে আরও পোক্ত করেছেন। এ নির্বাচনে পুতিনের জয় নিয়ে কখনো কোনও সন্দেহ ছিল না। কারণ তার সমালোচকরা বেশিরভাগ হয় জেলে, না হয় নির্বাসনে বা মৃত। এছাড়া পুতিনের প্রতি জনসাধারণের সমালোচনা দমিয়ে রাখা হয়েছে। রুশ এ প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আলেক্সি নাভালনি গত মাসে দেশটির আর্কটিক কারাগারে মারা যান। যদিও এ নির্বাচন গণতান্ত্রিক বৈধতার সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন পশ্চিমা বিশ্বকে উপেক্ষা করার এবং ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্তের প্রতিফলন হিসাবে এ ফলাফলটি তুলে ধরেন।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রায় ৬০ শতাংশ নির্বাচনী এলাকার ভোট গণনা শেষে পুতিন প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রাথমিক ফলাফল যে পাওয়া গেছে তাতে কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলাই খারিটোনভ মাত্র ৪ শতাংশের নিচে ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে, নবাগত ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ তৃতীয় এবং অতি জাতীয়তাবাদী লিওনিড স্লুটস্কি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। এ নির্বাচনে টানা তিন দিনের ভোটগ্রহণ শেষে ভোট বন্ধ হওয়ার সময় রাশিয়া জুড়ে ভোটদানের হার ৭৪ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল। এবারের নির্বাচনে ২০১৮ সালের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৬৭.৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেছেন, ভোট অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। যেভাবে পুতিন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বন্দি করেছেন এবং অন্যদের তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধা দিয়েছেন, তাতে নির্বাচন স্পষ্টত অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, এ ভোট প্রদান ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মতো হয়নি। এ নির্বাচনী জালিয়াতির কোনও বৈধতা নেই এবং হতেও পারে না।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় এখন তিনি পঞ্চম বারের মতো প্রেসিডেন্ট হবেন এবং সে ক্ষেত্রে তার ক্ষমতার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়বে। সে সঙ্গে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার রেকর্ডটি তার হয়ে যাবে। বর্তমানে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার রেকর্ডের মালিক জোসেফ স্টালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ। সাবেক সোভিয়েত আমলে দু’জনে ২৪ বছর করে ক্ষমতায় ছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিপি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুতিন প্রথম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুতিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেছিলেন। পরে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন পুতিন। ২০০৪ সালের নির্বাচনে ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন। বর্তমানে ৭১ বছর বয়সী ভ্লাদিমির পুতিন যদি ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন। তার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব ও ক্ষমতার মোট মেয়াদকাল পৌঁছাবে ৩০ বছরে।