ব্রেকিং নিউজ:

পযর্টন ডেস্ক: সংস্কৃত ভাষায় লক্ষদ্বীপ শব্দের অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমষ্টি। এ দ্বীপপুঞ্জে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি আর সুনীল আকাশের সঙ্গে রয়েছে শ্যামল কানন। সারি সারি নারকেল গাছ যেন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাখির চোখে বার্ডস আই ভিউ দেখলে চোখের পলক পড়বে না। এতটা নয়নাভিরাম সে দ্বীপের দৃশ্য। প্রকৃতি যেন এখানে আপন খেয়ালে সাজিয়েছে নিজেকে। অকৃপণ হাতে ঢেলে দিয়েছে রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ।

            লাক্ষাদ্বীপ: ভৌগোলিকভাবে দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রীয় দ্বীপসমূহর নাম। মালয়ালম ভাষায় লাক্‌ষাদুইপ্‌ অর্থাৎ “লক্ষ দ্বীপ” বা লক্ষদ্বীপ ভারতের একটি কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত অঞ্চল। লক্ষদ্বীপের অর্থ সংস্কৃত এবং মালয়ালম ভাষায় লাক্ষাদ্বীপ বা এক লাখ দ্বীপ। ৩২ বর্গ কিলোমিটার (১২ বর্গ মাইল) আয়তনের লক্ষাদ্বীপ হল ভারতের সবচেয়ে ছোট কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত অঞ্চল। লক্ষাদ্বীপের রাজধানী হল কাভারাত্তি। সমগ্র অঞ্চলটি একটি জেলা ও ১০ ​​টা মহকুমায় বিভক্ত পরিচালিত এবং এটি কেরালা উচ্চ ন্যায়ালয়ের ক্ষেত্রাধিকার অম্তর্গত। এটি ৩৬ টি দ্বীপের একটি দ্বীপপুঞ্জ যা পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে ল্যাকাডিভ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা প্রচীর রুপে কাজ করে। এটি ভারতের মালাবার উপকূল থেকে ২০০ থেকে ৪৪০ কিমি (১৩০ থেকে ২৭০ মাইল) দূরে অবস্থিত। ভৌগোলিক মতবাদ অনুসারে, অসংখ্য মৃত প্রবাল কীটের দেহাবশেষ সঞ্চিত হয়ে সমুদ্র মধ্যে এ দ্বীপসমূহের সৃষ্টি হয়। তাই এ দ্বীপপুঞ্জকে ‘প্রবাল দ্বীপ’ বলা হয়ে থাকে। যদিও এ অঞ্চলটি লক্ষদ্বীপ নামে পরিচিত। লক্ষদ্বীপ ১২ টা প্রবাল দ্বীপ, ৩ টা রিফ এবং ৫ টা জল প্লাবিত তীরের একটি দ্বীপপুঞ্জ যেখানে সর্বমোট ৩৯ টি দ্বীপ আছে। আসলে এ রিফগুলি জলে ডুবে যাওয়া প্রবাল দ্বীপ। এর কেবল গাছপালা হীন অল্প বালিময় অংশ জলপৃষ্ঠের ওপরে দেখা যায়। দ্বীপপুঞ্জটির ১০ ​​টা দ্বীপে মানুষের বসতি আছে ও ২৬ টি জনশুন্য দ্বীপ আছে। দেশী পর্যটকদের এর ৬ টা দ্বীপে যাবার অনুমতি আছে। অন্যদিকে বিদেশী পর্যটকদের কেবল ২ টি দ্বীপ আগাটি ও বংগারামতে যাবার অনুমতি আছে।

            জানা যায়, প্রায় ৩৬ টি ছোট প্রবাল দ্বীপ নিয়ে তৈরি লক্ষদ্বীপ। লক্ষ, আমিনদিভি ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে প্রায় ৩২ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে লক্ষদ্বীপ। অক্টোবর থেকে মার্চ হলো লক্ষদ্বীপ বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময়। এক সপ্তাহের ছুটিতে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন লক্ষদ্বীপ। এ দ্বীপের ১০ টি দর্শনীয় স্থানের তথ্য।

            ১. আগত্তি দ্বীপ: লক্ষদ্বীপের গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বার আগত্তি দ্বীপ। বিশ্বের অন্যতম সুন্দর লেগুনগুলোর মধ্যে একটি হলো এ আগত্তি। এখানকার সুন্দর সমুদ্র সৈকত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। এখানে সুইমিং, স্নরকেলিং, কায়াকিংয়ের মতো ওয়াটার স্পোর্ট‌স করার সুযোগ রয়েছে।

            ২. কদমত দ্বীপ: লক্ষদ্বীপের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হটস্পট এটি। কোরাল আইল্যান্ড, সমুদ্র সৈকতে গা ভাসানো, স্থানীয়দের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো, ডিপ-সি ড্রাইভিং এ সব করতে পারবেন আপনি।

            ৩. বাঙ্গারাম প্রবাল: অশ্রুবিন্দুপর আকৃতির দ্বীপপুঞ্জ বাঙ্গারাম পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। আগাত্তির খুব কাছে অবস্থিত এ বাঙ্গারাম দ্বীপ। এটা লক্ষদ্বীপের একমাত্র দ্বীপ যেখানে কোনো জনবসতি নেই। ফসফোরেসেন্ট প্লাঙ্কটনের জন্য বাঙ্গারাম দ্বীপ আসেন পর্যটকরা। অর্থাৎ, এ সমুদ্র সৈকত রাতে নীলাভ হয়ে ওঠে প্রবাল বালির কারণে। এখানে এশিয়ান ডলফিন, ফ্রগফিশ, অক্টোপাস দেখতে পাবেন।

            ৪. কালপেনি দ্বীপ: স্বচ্ছ নীল জল আর নীল দিগন্ত একসঙ্গে মিশে যায় কালপেনি দ্বীপপুঞ্জ। মলদ্বীপের থেকে কোন অংশে কম নয় কালপেনি দ্বীপপুঞ্জ। এ দ্বীপপুঞ্জেও আপনি সুইমিং, স্নরকেরিং ইত্যাদি ওয়াটার স্পোর্টস করতে পারবেন।

            ৫. কাভারত্তি দ্বীপ: এ সুন্দর লেগুনটি পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এখানকার স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে মসজিদ দর্শনীয় স্থান। মারিন অ্যাকোরিয়াম, এখানে উজরা মসজিদ ইত্যাদি ঘুরে দেখা যায়।

            ৬. আন্দ্রেত্তি দ্বীপ: আন্দ্রেত্তি হলো লক্ষদ্বীপের বৃহত্তম দ্বীপ। যা ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত। দ্বীপটি প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অপরূপ সংমিশ্রণ।এছাড়া দ্বীপটি তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। আপনি এখানে বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মের আকর্ষণীয় স্থানগুলো আবিষ্কার করতে পারেন।

            ৭. মিনিকয় দ্বীপ: মূল অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ। উত্তর দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মিনিকয়। এটা লক্ষদ্বীপের অন্যতম বড় লেগুন। এখানে ১১ টি গ্রামের ক্লাস্টার রয়েছে, যা আভাহ নামে পরিচিত।

            ৮. কিলতান দ্বীপ: ম্যাঙ্গালোরের সমুদ্রবন্দর থেকে লক্ষদ্বীপের এ অসাধারণ আইল্যান্ডে পৌঁছে যেতে পারবেন। ঔপনিবেসিক এ দ্বীপে আসার সেরা সময় হল শীতকাল।

            ৯. থিনাকারা দ্বীপ: আগাত্তি আইল্যান্ড থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের একটি ফেরি রাইড করে পৌঁছে যেতে পারবেন। রয়েছে দুরন্ত সব ওয়াটার স্পোর্টস ও অ্যাডভেঞ্চার। রয়েছে প্রাইভেট আইল্যান্ড, রিসোর্ট ও হোটেল।

            ১০. আমিনি দ্বীপ: ছোট কোরাল এবং নুডি পাথরের সাজানো ডিম্বাকৃতির এ দ্বীপটির নাম আমিনি। এখানকার সমুদ্র সৈকত থেকেএক সঙ্গে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পারবেন। এ দ্বীপে ছোট অনেকগুলো কাঠের কটেজ রয়েছে। যেগুলো থেকে আপনি দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ডুবে যেতে পারবেন। এ দ্বীপে আসার সেরা সময় গ্রীষ্মকাল।

খবরটি 648 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন