জাতীয় ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়কে জনগণের বিজয় উল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এ বিজয় আমার বিজয় নয়, এটি জনগণের বিজয়, বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে। নির্বাচনকে খুব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার সব ধরণের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, যেটা আপনারা (পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক) নিজেরা দেখেছেন। সোমবার (৮ জানুয়ারী) বিকেলে গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আগত বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের শুরুতে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমাদের অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। অন্য দলগুলো থেকে নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এবারের নির্বাচন ছিল ব্যতিক্রমী। এবার আমি প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিই। আমাদের দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের প্রতি আপনাদের বিভিন্ন দেশের গভীর আগ্রহ রয়েছে। আমি মনে করি যে, এটা আমাদের দেশের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি অত্যন্ত যুগান্তকারি ঘটনা। আমি অনেকবার নির্বাচন করেছি। মানুষের এত আগ্রহ আগে আর কখনো দেখিনি। সে জন্য আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ খুব আনন্দিত যে আপনারা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নির্বাচন সম্পর্কে নানা মতামত দিয়েছেন। সেটা অত্যন্ত উপযোগী উল্লেখ করে তিনি এজন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বিজয় জনগণের বিজয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ও সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি ও তাঁর দল জনগণের এ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছিলেন। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, একটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ তারা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভয় পায়। যে দল সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা নিজেরা চলতে পারে না। তাদের জনসমর্থন নেই। তারা সরাসরি নির্বাচনকে ভয় পায়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশের জন্য গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেটি আমরা করতে পেরেছি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিদেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি নিজের, পরিবার ও দেশের মানুষের পক্ষ থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের (বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক) আগমনের কারণে আমাদের দেশের গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের কথা বলবেন। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। আবহাওয়া অনেক ভালো। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে এটা আমি বিশ্বাস করি। গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সূচনা বক্তব্যের পর তিনি বেশ কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাব দেন।
বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না করায় গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে কি না, বিবিসি এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। কোন দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এ নয় যে দেশে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে মানুষ অংশ নিয়েছে কিনা। আপনি যে দলের (বিএনপি) কথা বলেছেন তারা আগুন দেয়, মানুষ হত্যা করে। কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এটা কি গণতন্ত্র। এটা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। তারা রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। দেশের মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে।
ভোট কম পড়া নিয়ে অপর প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, কে নির্বাচনে আসলো বা না আসলো, সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করেছে কি না সেটা বড় কথা। মানুষের অংশগ্রহণ বড় কথা। তিনি আরও বলেন, বিএনপি মানুষকে এ নির্বাচনে ভোট না দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি কত মানুষ মেরেছে সে প্রশ্ন তিনি (প্রশ্নকর্তা) করেননি। তারা ২০১৪-১৫ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে, পাঁচশ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এতে কীভাবে তাদের (বিএনপি) গণতান্ত্রিক দল বলা যায়। তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।
পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে কারণ এর পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।
ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের অনেক বড় বন্ধু। ১৯৭১ সালে তারা আমাদের সমর্থন করেছে। পঁচাত্তরের পর তারা আমাকে ও আমার বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। ঘরের পাশের প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা থাকলে আমরা তা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করেছি। প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় নিয়ে মার্কিন একজন পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটা এখন আপনাদের সরকারের ওপর নির্ভর করছে। আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। আমি কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। আমি খোলা মনের ও খুব উদারপন্থি মানুষ। দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলো স্বাধীনভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারে। তারা তাদের কাজ করতে পারে, আমি কখনো হস্তক্ষেপ করি না। যখন কেউ সমালোচনা করে তখন তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে শোধরানো যায়, আমি এভাবে দেখি।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সাথে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। যা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের আরেকটি সুযোগ করে দিয়েছে। বিপুল বিজয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য পঞ্চম বার ও টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনার পথ সুগম করেছে। নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে। সরকারি দল নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৪ টি আসন। প্রধান বিরোধী দল লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ টি আসন। বাজ পাখি ও ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র পেয়েছে ৬২ টি আসন। অন্যান্য পেয়েছে ১ টি আসন। স্থগিত করা হয়েছে ২ টি আসন। এর আগে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফল পরবর্তীতে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।