জাতীয় ডেস্ক: বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহনে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন অংশগ্রহনে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দিন থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ তার মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি করবে। মনোনয়ন ফরমের দাম ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বলেছেন যে, নির্বাচনে কাদেরকে মনোনয়ন দেবেন তার তালিকা পুরোপুরি ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। একেবারে নতুন এবং আনকোরা, ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কোন নির্বাচনে প্রার্থী হননি এমন অন্তত ৩০ জনের অধিক আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন এ ধারণা করা হচ্ছে। ১৭২ জন পুরনো প্রার্থী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য আবার টিকিট পাবেন। ১২৭ জন যে নতুন প্রার্থী রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন রয়েছেন যারা ২০০৮ বা ২০১৪ নির্বাচন করেছে। ২০১৮ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। এ রকম ব্যক্তিদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মনোনয়নে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়া ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদেরকে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৩০০ আসনের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। বর্তমানে যারা আওয়ামী লীগের এমপি আছেন তাদের মধ্যে অন্তত ১২৭ জন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেননা। তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তরুণ ও প্রবীণদেরকে মিলিয়ে এ মনোনয়ন তালিকা করা হয়েছে। প্রার্থীতা মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিছু আসনে আওয়ামী লীগ কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছে। যে সমস্ত আসন ঝুঁকিপূর্ণ, যে আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচিত হতে পারেনি, সে সমস্ত আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যেন তারা ভবিষ্যতে সংগঠন গোছাতে পারে। নির্বাচনে হারার পরও যেন তারা সাংগঠনিক কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখতে পারে। যারা ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মী তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বগুড়া, লক্ষ্মীপুরের মতো বিএনপি প্রবণ এলাকাগুলোতে সাংগঠনিক ব্যক্তিদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে চমক হিসাবে বড় শিল্প গ্রুপের অন্তত তিনজন ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া নির্বাচন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আরও কিছু নাটকীয় চমক থাকবে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় নির্বাচন করতে চায়। জাতীয় পার্টিকে আলাদা অবস্থানে রেখে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায়। কারণ বিএনপি যদি শেষ মুহুর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে কোন আসন যেন প্রার্থী শূন্য না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে তিনশ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত শরিকদের জন্য ৫০ টি আসন ছেড়ে দেবে। এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে খুব শিগগির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। যে আসনগুলো শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে সে আসনগুলোতে যারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আওয়ামী লীগ মহাজোটের অধীনে নির্বাচনে যাবে নাকি শুধুমাত্র ১৪ দলকে নিয়ে নির্বাচনে যাবে তা নিশ্চিত নয়।
আওয়ামী লীগ ধরে নিয়েছে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কাজেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এটা মাথায় রেখে মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ইঙ্গিত করেছেন যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে মনোনয়ন বাণিজ্য করার জন্য এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য।