তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: অনলাইন গণমাধ্যম জগতে এখন শুধুমাত্র লেখা বা স্থির চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং ভিডিও এবং অন্যান্য ভিজুয়াল উপাদান আধুনিক মিডিয়ার মূল চালিকা শক্তি। বহু প্রিন্ট মিডিয়া বর্তমানে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়িয়েছে ভিডিও কন্টেন্টের সংখ্যা। সাধারণ পাঠক ও গণমাধ্যমের দূরত্বে কমিয়ে আনতে ভিডিও এবং মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এখন অপরিহার্য। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং স্বয়ংক্রিয় ভিডিও তৈরির প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। সে সাথে বাড়বে এর চাহিদা। যা অনলাইন মিডিয়ার ভিজুয়াল অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। ঢোল পিটিয়ে খবর প্রচারণা থেকে কাগজ আর প্রিন্টিং প্রেস। সেখান থেকে রেডিও, টেলিভিশনের পথ ঘুরে হাতে থাকা মোবাইল। সংবাদ পরিবেশনের ধরণে যুগে যুগে এসেছে পরিবর্তন। সাধারণ মানুষের কাছে খবর সহজে পৌঁছে দিতে এসেছে নতুন সংযোজন। ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে অনলাইন গণমাধ্যমের চিত্রটা দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। পাঠক বা দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুধু লেখা বা ছবি যথেষ্ট নয়। বরং ভিডিও এবং মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এখন আধুনিক গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দু। এ পরিবর্তন কীভাবে এসেছে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন কেন ভিজুয়াল কন্টেন্টের ওপর জোর দিচ্ছে। এ জন্য ভিজুয়াল কন্টেন্টের জনপ্রিয়তার কারণ।
ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করা সহজ: গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্ক লেখা পড়ার চেয়ে ছবি এবং ভিডিও দ্রুত প্রক্রিয়া করতে পারে। ফলে পাঠকরা ভিজুয়াল কন্টেন্টের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। কানে শোনা, চোখের সামনে চলমান ঘটনা দেখতে পাওয়ায় ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। সংবাদ তাই সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করছে অনেকটা বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আধিপত্য: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভিজুয়াল কন্টেন্ট বেশি দেখা যায় এবং শেয়ার করা হয়। এসব প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদম ভিডিও এবং চিত্র ভিত্তিক কন্টেন্টকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়।
সার্চ ইঞ্জিনের অগ্রাধিকার: সার্চ ইঞ্জিন গুগল এখন ভিডিও কন্টেন্টকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউটিউব ভিডিও অনেক সময় গুগল সার্চের প্রথম পাতায় আসে। যা ব্র্যান্ড এবং মিডিয়াগুলোর জন্য এক বিশাল সুযোগ।
সংক্ষিপ্ত সময়ে তথ্য গ্রহণের সুবিধা: দ্রুতগতির জীবনে মানুষ দীর্ঘ লেখা পড়ার চেয়ে এক মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভিডিও বা একটি ইনফোগ্রাফিক দেখে তথ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করে।
অনলাইন মিডিয়ায় ভিডিও ভূমিকা:
১. নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ মাধ্যম: অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ভিডিও কনটেন্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাঠকেরা কেবল লেখা পড়ার চেয়ে ভিডিও রিপোর্ট দেখতে বেশি আগ্রহী। এর ফলে সাধারণ মানুষ নিজেকে ঘটনাস্থলের আরও কাছাকাছি নিতে পারে। লাইভ নিউজ ব্রডকাস্টিং এবং ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে তাই ভিডিও এখন অপরিহার্য।
২. এডুকেশন ও ই-লার্নিং: অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিডিও কন্টেন্ট বিপ্লব এনেছে। ইউটিউব, কোর্সেরা, ইউডেমির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে শিক্ষামূলক ভিডিও চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। সারাবিশ্বের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে এসব ই-লার্নিং প্রতিষ্ঠান।
৩. মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ভিডিও ব্যবহার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। নিজেদের পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার বিভিন্ন চিত্র গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব কমাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে সংস্থাগুলো বিজ্ঞাপন এবং প্রোডাক্ট মার্কেটিংয়ের জন্য টেক্সট কন্টেন্টের তুলনায় ভিডিও মার্কেটিংয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ভিজুয়াল কন্টেন্টকে আরও বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এ প্ল্যাটফর্মে ভিডিও পোস্টের এনগেজমেন্ট রেট ছবি ও লেখা পোস্টের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিজুয়াল কন্টেন্টের ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যতে অনলাইন মিডিয়ায় ভিজুয়াল কন্টেন্টের গুরুত্ব সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সংযোজন অনলাইন মিডিয়াকে আরও উন্নত করবে। ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও, ইন্টারঅ্যাকটিভ কন্টেন্ট এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভিত্তিক মিডিয়া কন্টেন্ট ভবিষ্যতের অনলাইন মিডিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভিডিও কন্টেন্ট: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিতে এক নতুন বিপ্লব এনেছে। এআই এর মাধ্যমে ভিডিও সম্পাদনা, অ্যানিমেশন তৈরি এবং অডিও ভিজ্যুয়াল অপ্টিমাইজেশন সহজতর হয়েছে। স্ক্রিপ্টের ভিত্তিতে সহজে যুক্ত হচ্ছে অটোমেটেড ভয়েস। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হয়ে ভিডিও গুণগতমান বৃদ্ধি করবে। যা ব্যবহারকারীদের আরও নিখুঁত এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট উপহার দেবে।
২. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর): ভবিষ্যতে ভিজুয়াল কন্টেন্টের অন্যতম প্রধান দিক হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর)। বর্তমানে ভিআর ও এআর প্রযুক্তির ব্যবহারে অনলাইন গেমিং এবং ই-লার্নিংয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে সংবাদ মাধ্যম, ই-কমার্স এবং বিজ্ঞাপন শিল্পে এ প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহার দেখা যাবে।
৩. লাইভ স্ট্রিমিং ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিডিও: লাইভ স্ট্রিমিং ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিউজ মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভবিষ্যতে ইন্টারঅ্যাকটিভ লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা আরও সম্পৃক্ত হতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, শপিং লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজের বাসায় কিংবা অফিস থেকে সরাসরি পণ্য দেখার ও কেনার সুযোগ পাবেন।
৪. ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও উত্থান: টিকটক এবং ইউটিউব শর্টসের জনপ্রিয়তা ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে সংক্ষিপ্ত ভিডিও আরও আধিপত্য বিস্তার করবে। ফেসবুকে রিলস এখন জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষে। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীলতার কারণে মানুষ এখন স্বল্পসময়ের মধ্যে বেশি তথ্য গ্রহণ করতে চায়। তাই ভবিষ্যতের কনটেন্ট নির্মাতারা ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও আরও গুরুত্ব দেবেন।
৫. ব্যক্তিগতকৃত ভিডিও কন্টেন্ট: এআই ভিত্তিক সুপারিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভিডিও কন্টেন্ট আরও ব্যক্তিগত হবে। ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী ভিডিও সাজেস্ট করা হবে। যা বিজ্ঞাপন ও কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
৬. অটোমেটেড ভিডিও ক্রিয়েশন টুলের উন্নয়ন: প্রযুক্তির ক্রমাগত উৎকর্ষের দিনে আগামী দিনে এমন সফটওয়্যার ও টুল তৈরি হবে। যা অল্প সময়ে ও কম খরচে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুণগতমান সম্পন্ন ভিডিও তৈরি করতে পারবে। এটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য ভিডিও প্রোডাকশনকে আরও সহজ করে তুলবে। সে সাথে সময়ের সাশ্রয়ের ফলে ভিডিও জগতে বাড়বে কন্টেন্ট সংখ্যা।