স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে পূর্ব-বেতছড়া দুর্বৃত্তরা পুড়ে দেওয়া ঘটনাস্থল তংগোঝিরি ত্রিপুরা পাড়া পরিদর্শন করলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুপায়ন দেব, জেলা পরিষদের সদস্য রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, লামা সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ারুল ও সরকারি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন। দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের ও স্থানীয় গন্যমান্যদের সাথে মতবিনিময় করেন পার্বত্য উপদেষ্টা। তিঁনি ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা পরিবারগুলোর দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেন। শিক্ষা, ওয়াটার স্যানিটেশনসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা ও তাৎক্ষণিক ৪ আসামি গ্রেফতার করতে পারায় পুলিশের প্রসংশা করেন। মতবিনিময় শেষে ত্রাণ হিসাবে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ পরিবারকে ২ বান্ডিল ঢেউটিন, ২৫ কেজি চাল, ২ টি কম্বল বিতরণ করা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, এ অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা জানাই। এ অগ্নিসংযোগে মানুষগুলো উদ্ভাস্তু হয়ে গেলো। এটা আমরা কোনোভাবে চাই না। যেভাবে হোক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সাহায্য সহযোগিতা এ সরকার করবে। এখানকার পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে পারস্পারিক ভ্রাতৃপ্রেম রয়েছে। প্রত্যেকে ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে খুব মানবিক এবং সম্প্রীতির বন্ধনে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করতে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সবকিছু করে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন সঠিক আইনের মাধ্যমে সঠিক স্থানে জমি হস্তান্তর করবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পূনর্বাসন করা হবে। প্রয়োজনে পানি সুব্যবস্থা করা হবে।
সরই ইউপি সাবেক মেম্বার আব্দুল হালিম বলেন, লামায় ভূমি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। লামায় শুধু এসপি ভূমি সমস্যা দিয়ে শেষ নয়। সাবেক এমপি বীর বাহাদুর, সাবেক আইজিপি বেনজির আহম্মেদ, মেরেডিয়ান কোং, ডেসটিনি ও অনেক প্রভাবশালী নেতারা নামে বেনামে কয়েক হাজার একর স্থানীয় পাহুিড় বাঙ্গালির জায়গা বেদখল করে রাবার বাগান ও বনায়ন করেছে। আরো আছে স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে কোয়ান্টাম কসমো ও অন্যান্য উদ্যাক্তারা যেনতেনভাবে এখানে কয়েক হাজার একর ভূমির মালিক বনে যাচ্ছে। বিপরীতে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবারগুলো ভূমিহীন হচ্ছে। এ সব দালাল চক্রের আগ্রাসন রোধে প্রশাসনের দৃষ্টি দিতে হবে।
এক স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু এসপি নামে জায়গা নয় আরো আছে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে বেনামে জায়গা বেদখল। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি আগ্রাসনের ভয়াবহ ঘটনা রয়েছে। এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা এমনকি কবরস্থানের জায়গাটুকু গ্রাস করে নিচ্ছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের লোকেরা। তারা শিক্ষা কার্যক্রমের আদলে স্বনামে ও বেনামে আট হাজার একরের বেশি ভূমি দখল করে রেখেছে। এর ফলে সরই ডলুছড়ি মৌজার কয়েক শত পাহাড়ি ও বাঙালিরা চাষের জায়গা হারিয়ে এবং জীবন জীবীকা নির্বাহে চরম সংকটে পড়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর ১ টার দিকে গভীর রাতে বান্দরবানের লামার উপজেলার সরইয়ের তংগোঝিরি পাড়া ত্রিপুরাদের ঘরবাড়ি দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে। এসপি বাগান নামে পরিচিত পাড়াবাসীদের বেদখল হওয়া জায়গা কথিত এসপির লোকজন চলে যাওয়ার পর ১৯ ত্রিপুরা পরিবার সেখানে বসবাস করে। তারা সবাই তংগোঝিরি পাড়ার বাসিন্দা। এ ১৯ পরিবারের পাড়াটি নাম দিয়েছে তংগোঝিরি নতুন পাড়া। বড়দিন উপলক্ষ্যে নতুন পাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি খালি রেখে সবাই তংগোঝিরি পাড়ায় যায়। কারণ নতুন পাড়ায় কোনো গীর্জা নেই। রাতে মানুষ শূন্য পাড়ায় দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয়। পাড়ার ১৭ টি ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুইটি ঘরে আগুন দিতে না পেরে ভাল রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।