ফিচার ডেস্ক: বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। গত ১৬ নভেম্বর ড. ইউনূসের এ সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব পাওয়া এ সরকার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত কিছু ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ জনগণের প্রশংসা পায়। বিপরীতে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে জনগণের মাঝে সমালোচনা আছে। সরকারকে বিগত ১০০ দিনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, মব সহিংসতা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি আদায়ে বিভিন্ন শ্রেণিগোষ্ঠীর আন্দোলন মোকাবিলায় বেগ পেতে হয়েছে। অবশ্য, সরকার তার তিন মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে এ সময়ে সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে এ দাবি করেছে সরকার। এ সময়ে পাঁচটি বড় কাজ করতে পেরেছে এ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্মুথ ট্রানজিশন, ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি উদ্ধার, ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তাপ্রাপ্তি, সংস্কারের পথরেখা দেওয়া এবং সমস্যা থেকে দেশকে উত্তরণের দিকে নেওয়া।
ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই দফায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম দফায় দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ২৫ আগস্ট তিনি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি কোন প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটা তুলে ধরেন। এতে বিগত সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে উল্লেখ করে সরকার এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুতেএ বিষয়ে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি জনগণের সহযোগিতার পাশাপাশি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান করেন। সরকারের একমাসের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার উদ্যোগের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে তিনি কয়েকটি সংস্কার কমিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করেন।
সবশেষে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সরকারের নেয়া নানা সংস্কার উদ্যোগ ও সাফল্য জাতির সামনে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিনে দেশ সংস্কারে অর্জিত বিষয় তুলে ধরেন। সংস্কারে অর্জিত বিষয় পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইবো। কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করবো। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদি মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এ বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩ টি হাসপাতাল ও বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুম কমিশনের তথ্যানুযায়ী অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। জুলাই গণ-অভ্যুথানে সকল শহীদর পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সবার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে সরকার ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর পাশাপাশি শিল্পকারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আনার ব্যবস্হা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ বলে আমরা মনে করি না। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না। সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ কতটুকু পাব নিশ্চিত নই। তবে সুযোগ দিলে অত্যাবশ্যকীয় কিছু সংস্কার কাজ শেষ করে আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করব। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার ১০০ দিনে অর্জিত রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম নিম্মরুপ।
একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ ও দফতর বণ্টন: বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দিন ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ও ১৬ জন উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলে প্রথম দিন ঢাকায় না থাকায় তিন জন শপথ নেননি। পরে দুই দফায় তারা শপথ নেন। প্রথম দফায় উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ জন এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ৪ জন উপদেষ্টা সরকারে যুক্ত হন। সর্বশেষ ১০ নভেম্বর আরও ৩ জন উপদেষ্টা শপথ নেন। সবমিলিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। তিন দফার শপথের পাশাপশি একাধিকবার উপদেষ্টা পরিষদের দফতর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। ছাত্রজনতার দাবির মুখে কোন কোন উপদেষ্টার দফতর পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে কোন উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা দেখা গেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ নিয়োগ দেওয়া তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। তাদেরকে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: প্রথম ১০০ দিনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের অনুপস্থিতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় প্রথম দিকে ঘন ডাকাতির খবর পাওয়া যায়। পরে পরির্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হলে সাম্প্রতিক সময়ে এসব ডাকাতি-ছিনতাই অনেকাংশে কমে এসেছে।
প্রশাসনের নিয়োগ পদায়ন পদোন্নতি: গত ১০০ দিনে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল হতে দেখা গেছে। হাতে গোনা দুয়েকজন ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রায় সব সচিব ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন পদায়ন হয়েছে। বিগত সরকারের কয়েকজনকে পদচ্যুত, চুক্তি বাতিল ও বেশিরভাগ প্রভাবশালী আমলাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের পরিবর্তন করা হয়েছে। বিগত ১৬ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের এ সময়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কেউ দুই-তিন দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের পদায়ন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। বর্তমান সরকারের প্রতি অনুগত এমন অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এ সময়ে জেলা প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। ডিসি নিয়োগে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। সরকারের তদন্তে এ অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ইস্যু শেখ হাসিনার পদত্যাগ: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করে গেছেন। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তবে তার পদত্যাগের কোন প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ্যে আসেনি। এরমধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নে একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়। পরে অবশ্য গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগকে কেন্দ্র করে অমীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোন বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এতে বলা হয়, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে। সেগুলোর উত্তর আপিল বিভাগের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে। একই সময়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা থাকলে ছাত্র-জনতা গণভবনের কাছাকাছি চলে আসলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় খুনি হাসিনা।
আটক সাবেক এমপি ও মন্ত্রী: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সাবেক সরকারের এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী সদস্যদের গ্রেফতার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাবেক সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা আমলাদের গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন মামলায় ইতোমধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাহাজান খান, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আহমদ হোসেন, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আসম ফিরোজ, জুনাইদ আহমেদ পলক, হাজী মো. সেলিম, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, আসাদুজ্জামান নূর, নুরুল ইসলাম সুজন, ফরহাদ হোসেন, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, টিপু মুনশি, দীপু মনিসহ বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি-মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। এদের অনেকে একাধিক দফায় রিমান্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। জাতীয় পার্টির কয়েকজন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী আটক হযেছেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম, হেলালুদ্দীন আহমেদ, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বিচারপরিত শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও অনেকে গ্রফতার হয়েছেন। আদালতে নেওয়ার সময় তাদের অনেকের ওপর হামলা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ আগের সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের লাল পাসপোর্ট। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তার সবগুলো বাতিল করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের হিড়িক: শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছেড়েছেন, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্থ ও নানান চাপের মুখে কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর ও শীর্ষ পদের ব্যক্তিরা দায়িত্ব ছাড়েন। উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজে পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপের মুখে কেউ পদত্যাগ করেন। অবশ্য কয়েকটি ক্ষেত্রে পদত্যাগ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। সরকারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্বিক কমিশনের সবাই ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিধিবদ্ধ সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে কিন্তু এখন দুদক গঠন হয়নি। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সরকার সার্চ কমিটি গঠন করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের তৃতীয় প্রধান ব্যক্তিত্ব স্পিকার ড. শিরন শারমিন চৌধুরী এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
ইউপি বাদে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মাথায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার। পটপরিবর্তনের পর সরকার সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে কিংবা পরিষদে না যাওয়ায় নাগরিক সেবা ব্যাহতের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। স্থানীয় সরকারের ওই চারটি প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। যেসব জায়গায় চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন, সেখানে কাজ চালিয়ে নিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করতে পরিপত্র জারি করেছে সরকার।
স্থাপনার নাম পরিবর্তন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেশকিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম শুরু করে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ প্রতিষ্ঠানের নাম করা হয় জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। এরইমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এর নাম পরিবর্তন করে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের নাম পরির্তন করে গাজীপুর সাফারি পার্ক নামকরণসহ শেখ মুজিব, শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে উপদেষ্টা পরিষদের চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় আট দিবস বাতিল: অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় দিবস বলে পরিচিত আটটি জাতীয় দিবস বাদ দিয়েছে। দিবসগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস। এর আগে শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে সরকার। এদিকে এ দিবসগুলো বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের আন্দোলন: এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে দেশের নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মাঝে ঢাকা ও বিভিন্ন স্থানে নানান দাবিতে একের পর এক বিক্ষোভ-আন্দোলন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। বিগত দুই সপ্তাহে এই আন্দোলন কিছুটা কমলে এর আগে প্রায় প্রতিদিন সরকারকে কোন না কোন মহলের আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা প্রাঙ্গণে অবস্থান ও ঘেরাও কর্সূচি হয়েছে। অন্য আন্দোলন কিছুটা প্রশমিত হলে এখন বকেয়া বেতনের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আন্দোলনের মাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ। গত ২৫ আগস্ট তাদের একটি অংশ সচিবালয়ের মতো কেপিআই এ ঢুকে পড়ে। বিগত ১০০ দিনে পরীক্ষায় অংশ না দিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন, তারা ফল পরিবর্তনে সচিবালয় ও দেশের শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে আন্দোলন করেন। এছাড়া সাত কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরির বয়স বৃদ্ধি ও তিন বারের বেশি বিসিএস দিতে না পারার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীদের আন্দোলন, মাস্টার রোলে কর্মরত কর্মচারীদের আন্দোলন ও বেশকিছু আন্দোলনের মুখে পড়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী দলগুলো বাদে ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করেছেন। সরকার প্রথম দিকে একটি বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানালে পরবর্তীকালে ছাত্র-জনতার বিরোধিতার মুখে দলটিকে দ্বিতীয় দফার সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সংলাপ ধারাবাহিক এবং এ সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
ইস্যু জাতীয় পার্টি: গত ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। দলটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয়। দলটি সরকারের অংশীদার হয়। পরে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে জাতীয় পার্টি। তবে দলটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের একটি পর্যায়ে এসে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেয়। ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শুরুতে বহাল তবিয়াতে ছিল দলটির নেতারা। জাপার প্রতিনিধিরা প্রথম দফায় প্রধান উপেদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ করে সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। পরে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী উল্লেখ করে দলটির বিষয়ে ছাত্ররা আপত্তি জানালে পরের সংলাপে তাদের ডাকা হয়নি। এমনকি জাতীয় পার্টি রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা প্রতিহত করে। দলটির কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সম্প্রতি দলটির কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবির মুখে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে গত ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন ও নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
আওয়ামী লীগের তৎপরতা: গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। প্রথম কয়েকদিনে একেবারে চুপ থাকলে ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে প্রথমে সামনে আসে ক্ষমতাচ্যুত এ দলটি। ভারতে অবস্থানরত দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ সময় শোক দিবস পালন ও ৩২ ধানমন্ডিতে শ্রদ্ধা জানাতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তবে, ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে তারা সে কর্মসূচি ঢাকায় সফল করতে পারেনি। অবশ্য ঢাকার বাইরে টু্ঙ্গিপাড়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে দিবসটি পালনের তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি অত্যাচার নির্যাতনের চিত্রসহ বর্তমান সরকার বিরোধী তথ্য নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে। ফেসবুক পেজ থেকে নানা ধরনের বক্তব্য বিবৃতি প্রচার করা হচ্ছে। এদিকে প্রথমে নিষ্ক্রিয় থাকলে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করছে। অবশ্য বেশিরভাগ থেকে গভীর রাতে ও ভোরবেলায় এ মিছিলগুলো হচ্ছে এ খবর প্রকাশিত হয়। আওয়ামী লীগ নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সর্বশেষ ৯ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। দলের ফেসবুক পেজে এ কর্মসূচি পালনে সবাইকে জিরো পয়েন্টে জড়ো হতে বলা হয়। দলের প্রধান শেখ হাসিনার একটি কথোপকথন এ সময় প্রচার হয়। সেখানে তিনি নূর হোসেন দিবস পালনের নির্দেশ দেন। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও ছাত্র-জনতাসজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পণ্ড হয়। কয়েকটি স্থানে মিছিল বের করতে গিয়ে তারা মারধরের শিকার হয়। অবশ্য ৯ নভেম্বরের পর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ ও কয়েকটি জায়গায় আওয়ামী লীগকে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেছে।
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ দাবি: শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এখনও স্বপদে রয়েছেন। যার কারণে শুরু থেকে তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। এরমধ্যে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের সঙ্গে কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কিনা তার দালিলিক কোন কাগজ তার কাছে নেই। এরপর তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়। ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও করে। সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তিনি জানান। পরে অবশ্য বিএনপি ও কিছু রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন: রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথম দফায় ৬ টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এগুলো হলো, সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এসব কমিশন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ইতোমধ্যে পুরোদমে তাদের কাজ শুরু করেছে। তিন মাস মেয়াদী এসব কমিশনের আগামী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে তাদের সুপারিশ পেশ করার কথা রয়েছে। পরে সরকার আরও ৪টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। এগুলো হলো স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একাধিক টাস্কফোর্স। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে সরকার।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ক্ষমতা নেওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শতাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের প্রায় সবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ পুনর্গঠন: আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। গত ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের অন্য ৫ বিচারপতি তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর নতুন বিচারপতি নিযুক্ত হন আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একই সময়ে আপিল বিভাগে নতুন আরও ৪ জন বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। অপরদিকে সরকার নতুন করে হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। সেসঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে অনেক মামলার রায়। আওয়ামী লীগ শাসনামলে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দেওয়া ছয় মাসের দণ্ড ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার আগের দিন বাতিল করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অপরদিকে, শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। কিন্তু সরকার পতনের একদিন পরে রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মামলাগুলো মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল এ অভিযোগ করে আসছিল বিএনপি। এর বাইরে, মুক্তি দেওয়া হয়েছে কোটা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলাকালে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন গত দেড় দশকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি বিএনপি, জামায়াতে ও তাদের সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী, যাদের মধ্যে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া গিয়াস উদ্দিন আল মামুন রয়েছেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সাজা ইতোমধ্যে মওকুফ হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা নিয়ে বিচার কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজি ও বেশ কয়েকজন সদস্য, র্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়।
দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও লাগাম টানা যায়নি: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারকে নিত্যপণ্যের দাম সংক্রান্ত চাপ সামলাতে হচ্ছে। চাল, তেল, ডিম, পেঁয়াজ ও প্রায় প্রতিটি নিত্যপণের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়। মুরগি এবং সবজির দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। এ অবস্থায় আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হলে তাতে বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এ সময় সরকার অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সালেহউদ্দিন আহমেদকে কিছুটা ভারমুক্ত করে নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। অবশ্য প্রত্যাশিত হারে না হলে গত দুয়েক দিন হলো সবজি ও কিছুপণ্যের মূল্য কমেছে।
মব সহিংসতা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর বাংলাদেশের অনেক স্থানে মব সহিংসতা হয়েছে। অন্তর্বতীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার আগের তিন দিন সারা দেশের বেশকিছু স্থানে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেটা অব্যাহত দেখা যায়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের প্রতিবেদন মতে, আগস্ট থেকে অক্টোবর এ তিন মাসে দেশে গণপিটুনিতে ৬৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় নিহত হয় ২৮ জন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক মব সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেন, মব ভায়োলেন্স কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি অপরাধের তদন্ত করতে হবে। অবশ্য এর আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে মব ভায়োলেন্স বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সতর্ক করে দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে এবং বিচার নিশ্চিত করবে সরকার।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ঘটনার অভিযোগ ওঠে। বাড়িঘরে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও উপাসনালয়ে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট থেকে থেকে ১৬ দিনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১ হাজার ৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সময় কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও কয়েকটি স্থানে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য ইসকনপন্থিদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ইসলামপন্থিরা। গত অক্টোবরে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪ জন নিহত হয়। এছাড়া বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আপরদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মো. মামুন নামে এক যুবক মোটর সাইকেল চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটেলার বাঙ্গালী ও পাহাড়ি দুই পক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনাকে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে দীঘিনালা বাঙ্গালী ও পাহাড়ি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) নামে ১ জন পাহাড়ি নিহত ও ৫ জন আহত হয়। এ সময় লারমা স্কয়ার এলাকার বাজারে আগুন দেয়। এ ঘটনায় ৫০ টি বেশি দোকান পুড়ে যায়। এ দিন রাতে খাগড়াছড়ি সদরে রুবেল ত্রিপুরা (২৫) নামে ১ জন পাহাড়ি নিহত হয়। এর পর দীঘিনালা সংঘর্ষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহর এলাকায় পাহাড়ি বসতিতে আক্রমণ করলে পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জুনান চাকমা (২০) নামে ১ জন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৫৩ জন। আগুন দেওয়া হয় শহর এলাকায় বনরুপা, দক্ষিণ কালিন্দপুর, বিজন সারণি, উত্তর কালিন্দপুর, হাসপাতাল এলাকা ও একাধিক এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়। আগুন দেওয়া হয় অফিসের যানবাহন। সাংবাদিকদের বাইকসহ শতাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুরো শহরে থমথমে অবস্থা ছিল।পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
আরও যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সে সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও অনুসন্ধান, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল, দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১) এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা, গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে এমন প্রকল্প পুনরায় যাচাই বাছাই করার সিদ্ধান্ত।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ নয় বলে উল্লেখ করে ব্রাসেলস ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আইসিজি। তারা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি, জনগণের প্রত্যাশা ধরে রাখা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক সমর্থন সংহত করা, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংস্কারসহ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নানা সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু সুপারিশ করেছে। এর আগে সরকারের তিনমাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শকিকুল আলম বলেছিলেন, তিন মাসে সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে। পাঁচটি বড় কাজ হয়েছে। একটি হলো স্মুথ একটি ট্রানজিশন (শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তন) হয়েছে। দুই. একটি ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি উদ্ধার হয়েছে। তিন. ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তা পাওয়া গেছে। চার. সংস্কারের পথরেখা দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ হবে, তখন সংস্কার কতটুকু করা হবে এবং সেটার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের তারিখ। পাঁচ. এ তিন মাসে বন্যা, গার্মেন্টসে অস্থিরতাসহ অনেকগুলো সমস্যা ছিল। সেসব সমস্যা থেকে দেশকে উত্তরণের দিকে নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি এ সমস্যাগুলো কতটা ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায়।