পার্বত্য চট্টগ্রাম ডেস্ক: রাঙ্গামাটিতে সফরে গেলে সহিংসতা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। সহিংস ঘটনার ১৯ দিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেছেন তিনি। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ অন্যান্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বৈঠক করেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আগে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন, গাড়ি পুড়ানো ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে মৈত্রী বিহারে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দরখাস্ত (আবেদন) দিতে বলেছি এবং ডিসি ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিবেন। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করব। আমরা চাই সঠিক বিচার যেন হয় এবং কোনো হয়রানি যেন না হয়। পাহাড়ি বাঙালি যে হোক, দোষী যেন দোষী হয় এবং এটা আমাদের উদ্দেশ্য। এ সময় রাঙ্গামাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইনও আছে, শৃঙ্খলাও আছে এ কথা জানান পার্বত্য উপদেষ্টা। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে দেখিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন রাখার মতো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা রাখার আহবান জানান।
এ সময় পার্বত্য উপদেষ্টার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএস মং মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজুসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর ২১ সেপ্টেম্বর পার্বত্য এ দুই জেলায় এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অ.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তারা কোনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই চলে যান। এর পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে উপদেষ্টাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএস মং মারমা। এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে উপদেষ্টারা সমালোচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অ.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সহিংসতার ঘটনায় একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীকে আহবায়ক করে তিন পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সদস্য করে ৭ সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় কমিশনার। এ কমিটির তদন্ত চলার মধ্যে গত ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর আবার পাহাড়ি বাঙালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এরপর ৬ অক্টোবর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতায় পাহাড়ে এবার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার ঘোষণা দেয় পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ। এরপর (৮-৯ অক্টোবর) রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনার ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়া দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা। এ সফরে রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হ্যাপির মোড়, এস.কে. মার্কেট, শেভরণ ডায়াগনস্টিক, বনরূপা বাজার, কাটাপাহাড়, কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন তিনি। পরিদর্শনকালে পার্বত্য উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।