ব্রেকিং নিউজ:

বিশেষ খবর ডেস্ক: বাংলাদেশের ৯টি জেলায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক ভয়ংকর বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এসব জেলার বেশিরভাগ মানুষ। এছাড়া বন্যার পানিতে সব গ্রামীণ সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে গবাদিপশু, পুকুর ও খামারের মাছ। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো, ফেনী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি।

            ফেনী: এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায়। প্লাবিত হয়েছে এ তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম, পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা পরিস্থিতিতে ডিঙি নৌকায় পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। উদ্ধারে নামেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেনীর বাসিন্দারা। গত ৩৬ বছরে অনেকবার বন্যা হলে এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। এবারের বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

            নোয়াখালী: নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে ৮ টিতে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিন দিন ধরে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি থই থই করছে।

            চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে ভাঙন দেখা দিয়েছে ধুরং নদের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে।

            কুমিল্লা: কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

            রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি সদর ও বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঞ্চল অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বাঘাইছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। রাঙামাটির সাথে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও নদী পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই বাধের পানি বিপদ সীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোন সময় কাপ্তাই বাধের পানি ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

            খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি সদর ও পানছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে দীঘিনালা উপজেলায় আরও অবনতি হয়েছে। দীঘিনালায় এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা ও লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

            মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ছড়া ও নদ-নদী দিয়ে তীব্র বেগে ভারত থেকে আসছে পানি। মনু নদের পানি বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য প্রধান তিন নদ-নদী ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে, উপচে ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

            সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদী ও হাওর এমনিতে ভরা বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। তাই পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তা আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জে জুন মাসের মাঝামাঝি ও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই দফা বন্যা হয়েছে। এতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে বন্যায় ৩০ হাজার ঘরবাড়ির বিধ্বস্ত হয়েছে।

            হবিগঞ্জ: টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোয়াই নদের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে আছে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ। নদীর মাছুলিয়া, শায়েস্তাগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তে ১২৩ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি খোয়াই নদের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি।

            সিলেট: বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও কমেনি মানুষের ভোগান্তি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে লোকজন ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকে এমন বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হননি।

            ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে।  ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পানির তোড়ে গাজীর বাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

খবরটি 404 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন