ফিচার ডেস্ক: খেজুর সব বয়সের মানুষের খুব পছন্দের একটি উপকারী ফল। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফল এটি। তালজাতীয় শাখাবিহীন খেজুর গাছ প্রধানত মরুভূমি এলাকায় জন্মে। পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকা দেশগুলোতে খেজুর চাষের প্রচলন বেশি। অনেকের মতে ইরাক অথবা মিসর খেজুর ফলের আদি স্থান। তবে এখন অল্প পরিসরে বাংলার মাটিতে ফলছে মরুভূমি অঞ্চলের খেজুর। ব্যাপক হারে এর চাষবাসের জন্য শুরু হয়েছে গবেষণা। চলছে বীজ ও চারা উদ্ভাবনের জোর প্রচেষ্টা। আর শেষ পর্যন্ত এটি সফল হলে বাংলাদেশে মরু অঞ্চলের খেজুর চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। মূলত সুপ্রাচীনকাল থেকে খেজুর ফলের বাগান করা মানুষের জীবন ধারণের একটি অন্যতম পেশা ও অবলম্বন ছিল। আরব দেশগুলো মরুভূমি এলাকার যেখানে অন্য কোনো গাছপালা জন্মানো সহজ হয় না সেখানে খেজুর বাগান করে মরুদ্যান সৃষ্টি করতো। খেজুর যেসব দেশে বেশি চাষ হয় তার মধ্যে সৌদি আরব, মিসর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, আলজেরিয়া, সুদান, ওমান, লিবিয়া ও তিউনেশিয়া অন্যতম।
এছাড়া অধুনা চীন, ভারত ও আমেরিকার কিছু অংশে সফলভাবে খেজুর চাষ করা হচ্ছে। খেজুর যে দেশে হোক না কেন বছর জুড়ে বিশ্বের সব দেশের মানুষ খেজুর খেতে পছন্দ করেন। আর বাংলাদেশে রোজার মাসে ইফতারে খেজুরের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। একটা সময় পর্যন্ত দেশি খেজুরের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল বিদেশি খেজুর। সৌদি আরব থেকে আসা খেজুর। কেবল রোজার মাসকে উপলক্ষে টনকে টন খেজুর আমদানি হত প্রতিবছর। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে সে সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুর চাষ হচ্ছে দেশে। আর মরুভূমির খেজুর চাষ করে এর মধ্যে সফলতার মুখ দেখছেন দেশের অনেক তরুণ কৃষি উদ্যেক্তা।
পুষ্টিগুণের দিক থেকে খেজুর সমৃদ্ধ একটি ফল। খাদ্য হিসেবে খেজুরের জুড়ি নেই। খেজুর ফলের ওষুধিগুণ খুব বেশি। খেজুর ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ ফল। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়। এছাড়া খেজুর আহারে বাড়ায় হজম শক্তি। আর রক্তের স্বল্পতা কমায়। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়া খেজুর মানব শরীরের বিভিন্ন রকমের এলার্জি ও ক্যানসার রোধক হিসেবে দারুণ কাজ করে। খেজুর দেহে শক্তি জোগায়, হার্টকে সুস্থ রাখে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, দেহের হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে। রক্তশূন্যতা, গলাব্যথা, ডায়রিয়া, সুস্থ গর্ভধারণে এ ফল অতি উপকারী বলা এ খেজুরকে।
পৃথিবীতে প্রায় এক হাজারের বেশি খেজুরের জাত রয়েছে। এর মধ্যে কেবল সৌদি আরবে ৪ শত বেশি জাতের খেজুর উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে জনপ্রিয় জাতের মধ্যে আজওয়া, বেরহি, সামরান, জাহেদি, মরিয়ম, আনবারাহ, আসমা উল হুসনা, ইয়াবনি অন্যতম। এর মধ্যে আজওয়া, বেরহি এবং মরিয়ম জাতের খেজুর এখন বেশি চাষ হচ্ছে। খেজুর গাছে নারী ও পুরুষ ভেদ আছে। পুরুষ গাছে ফল হয় না। কিন্তু পরাগায়ণের জন্য পুরুষ গাছ দরকার হয়। খেজুর গাছের পরাগায়ণ পোকা মাকড়, মৌমাছি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে কম হয়ে থাকে। হাত দিয়ে অথবা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ণ করতে হবে। বাগানে ১ শটি স্ত্রী গাছের সাথে মাত্র ১টি পুরুষ গাছ থাকলে পরাগায়ণের জন্য যথেষ্ট।