জবভ:                                                                                                       উধঃব:  ৩০ জুন ২০২৪

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 

সংবিধানের বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ বাতিল ও সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, গণসমাবেশ

“বাঙালি জাতীয়তা মানিনা, লড়াই চলছে, চলবে” এই শ্লোগানে সংবিধানের বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ বাতিল ও সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ৩০ জুন ২০২৪, রবিবার বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ আইন পাসের ১৩ বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিগত ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসেেদ এই সংশোধনী পাস করা হয়।

            খাগড়াছড়ি সদর: বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজার থেকে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া হয়ে উপজেলা পরিষদ গেইট এলাকা ঘুরে আবার স্বনির্ভরে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ও নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

            উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক লালন চাকমা ও পার্বত্য নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কনিকা দেওয়ান। এছাড়া সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষেদের জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা ও হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা

            ইউপিডিএফ সংগঠক লালন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জনগণের মতামত ও ন্যায্য অধিকারকে অবজ্ঞা করে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ কালো আইন পাস করা হয়। তিনি বলেন, একজন বাঙালি যেমন পাহাড়ি হতে পারেনা তেমনি একজন পাহাড়ি কখনো বাঙালি হতে পারেনা। আমরা নিজ নিজ জাতিগত পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। এই জাতিগত পরিচয় দেওয়ার অধিকার যে সংবিধান কেড়ে নেয় সেই সংবিধান আইন আমরা প্রত্যাখ্যান করি। তিনি তার বক্তব্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর কপি পুড়িয়ে ফেলার আহ্বান জানালে সমাবেশ উপস্থিত লোকজন পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে মুহুর্মুহু শ্লোগান দেন। এ সময় সমাবেশের ব্যানারের সামনে পিসিপি’র জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’র কপি পুড়িয়ে ফেলেন।

            সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আত্মপরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে নানাধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি শাসকগোষ্ঠির এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান।  তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে বিনষ্ট করার জন্য পর্যটন স্পট করা হচ্ছে এবং একই সাথে সেখানে জুম্ম মেয়েদের খারাপ পথে ধাবিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। সমাবেশ থেকে বক্তরা অবিলম্বে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানে সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তর সাংবিধনিক স্বীকৃতির দাবি জানান।

            বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি): বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের ১৩ বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের উদ্যোগে আজ সকাল ১০ টার সময় বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক উজো বাজারের পাশে গঙ্গারামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও সাজেকের বিভিন্ন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে, ইঞ্জিনচালিত বোট যোগে, জীপগাড়ি যোগে হাজার হাজার এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুরুব্বী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমাবেশে যোগদান করেন।

            সমাবেশে ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক চন্দন চাকমার সভাপতিত্বে ও বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক রুপেশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি উপজেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক অক্ষয় চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাট জেলা দপ্তর সম্পাদক কিরণ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি বীর চাকমা, হিল উইেমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নন্দা চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অর্চনা চাকমা।

            সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক চন্দন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসন উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিলিন করে দেয়ার জন্য সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত জাতিসত্তাগুলোর ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিযেছে। এর মাধ্যমে সরকার তার উগ্র জাতীয়তাবাদী মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের যে লক্ষ্য তা পরিস্কার করেছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলো বাঙালি নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তা আরোপ করা হলে তৎকালীন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা ২০১১ সালে আবারো সংবিধানে পাহাড়িসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে বাঙালি বানিয়েছেন।

            চন্দন চাকমা আরো বলেন, আমরা পাহাড়ি জনগণ যুগেযুগে স্বাধীন ছিলাম। কিন্তু কালক্রমে আমাদের স্বাধীনতা, ভোগলিক সীমানা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বৃটিশরা পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়ার কারণে পাহাড়ি জনগণের ওপর চরম দুর্দশা নেমে এসেছে, যা আজো চলমান রয়েছে। এসব ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠির পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে পাঁয়তারা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকে সরকার-শাসকগোষ্ঠি সেনা শাসন জারি রেখে পাহাড়িদের উপর অন্যায়-অবিচার চালাচ্ছে, ভূমি বেদখল, উচ্ছেদ করছে। সরকারের এমন অমানবিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তিনি বৈরি প্রকৃতির মধ্যেও সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য উপস্থিত সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা তথা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

            অক্ষয় চাকমা বলেন, আমরা বাঙালি নয়, আমরা পাহাড়ি। যে সংবিধান আমাদের বাঙালি বানায়, সেই সংবিধান আমরা মানিনা। তিনি বলেন, সাজেকে মুসলিম শুন্য এলাকায় বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যায় সেখানে হাসপাতাল না করে মসজিদ কেন? যেখানে কোন মুসলিম নেই সেখানে মুসলিমের নামে গ্রাম কেন? যেখানে নিজের ভিটামাটিতে বসত ঘর করতে বাধা, সেখানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কেন? তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর বাঘাইছড়ির মাটি যে বিপ্লবীদের ঘাটি তার প্রমাণ আমরা বহু আগে থেকে পেয়েছি। আমাদের বোন কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রূপনের আত্মবলিদান দিয়েছেন, সমর-সুকেশ ও মনতোষ সেটলারদের দ্বারা গুমের শিকার হয়েছেন। ২০০৮ ও ২০১০ সালে সাজেককের ক্ষাকরতে গিয়ে বুদ্ধপুদি, লক্ষী বিজয় ও লাদুমুনি আত্মবলিদান দিয়েছেন। গত ১৮ জুন বাঘাইহাট বাজারে অবস্থানরত ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছেন সাজেকবাসী। সাজেকএলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাড়িঁয়েছেন, আগামীতেও অন্যায় প্রতিরোধে সব সময় সোচ্চার থাকবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ সঙগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান।

            এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, মানিকছড়ি, রামগড়, লক্ষীছড়ি এবং রাঙামাটির কুদুকছড়ি, নান্যাচরসহ বিভিন্ন জায়গায় একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বার্তা প্রেরক

 

নিরন চাকমা

প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

খবরটি 372 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen