ব্রেকিং নিউজ:

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে রুমা, থানছিতে ব্যাংক ডাকাতি সামরিক চৌকি ও থানছি থানায় হামলার ঘটনায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আটকে যৌথ অভিযান অব্যহত রয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে রুমা উপজেলায় বেথেল পাড়া, থানচি ও বান্দরবান সদরে অভিযান চালিয় বিপুল সংখ্যেক কেএনএফ সন্ত্রাসী আটক করা হয়েছে। যৌথ অভিযানে বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও এপিবিএন এর সম্বনয়ে গঠিত যৌথবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে অংশ নেয়। এ সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। এ যৌথ অভিযানে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) স্থানীয় প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমসহ আটক করা হয় ৬২ জন বম জনগোষ্ঠীর নারী পুরুষ। যৌথ বাহিনী আটক করার পরে পুলিশের হেফজতে দিলে গ্রেফতার করে নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। গ্রেফতার মধ্যে বম জনগোষ্ঠীর কেএনএফ সদস্য ১৯ জন নারী ও ৪৩ জন পুরুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ জন রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ার বাসিন্দা। গ্রেফতার হওয়া অন্য ১৩ জন বান্দরবান সদর উপজেলা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার বাসিন্দা। রুমা ও থানছি এ ব্যাংক ডাকাতি ঘটনায় ৮ টি সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলা করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

            সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটক করা হয়, জেলার রুমা উপজেলার বেথেল পাড়া থেকে লাল মুন সাং বমের ছেলে সাপলিয়ান থাং বম (২১), নলথন বমের ছেলে লাল রিন সাং বম (২৫), সানথিয়াং বমের ছেলে সাইরাস বম (২৫), মৃত চম নিনের ছেলে মুন থাং লিয়ান বম (৩৩), সান খিয়াং বমের ছেলে পাছুং বম (৪৪), লুং থাং বমের ছেলে ভান লাল দিক বম (৩২), লাল মুন সাং বমের ছেলে জাসুয়া বম (৪২), রেম নিয়ার বমের ছেলে ভারৌ সাং বম (৩২), সাংসিং বমের ছেলে নলথন বম (৫৫), সিমথান বমের ছেলে লাল রাম তিয়াম বম (৪৪), জালিয়ান লাল বমের ছেলে লালদাম লিয়াম বম (৩৬), মৃত সাং খন বমের ছেলে লম জুয়াল বম (৫০), জিং সাং বমের ছেলে রাম থাং লিয়ান বম (১৭), লাল তুয়ার বমের ছেলে ভান রুয়াত ময় বম (২৩), জিং আল বমের মেয়ে লাল ইমানুএল বম (৪৩), লাল থান কুম বমের ছেলে লালমুন লিয়ান বম (২৮), লাল ময় থাং বমের ছেলে লাল থাং পুই বম (১৯), ক্লিয়ার বমের ছেলে জেমস মিলটন বম (৩৪), বিয়াক থন বমের ছেলে রোসাং লিয়ান বম (৩০), রাম সিম বমের ছেলে লাল রোয়াত লম বম (৪৫), দং নিন বমের ছেলে লাল দিন থার বম (৪০), চেও দির বমের ছেলে জৌনুন নাং বম (৪৫), চেও বমের ছেলে রেম থন বম (৬০), মৃত চয়তিম বমের ছেলে পেনাল বম (৬০), সাপইয়াং বমের ছেলে রুয়াল কম লিয়ান বম (৫৫), লাল জা লিয়ান বমের ছেলে লাল রাওখম বম (৩৭), রেম নিয়ার বমের ছেলে ভান লাল সম বম (৩৪), সান থিয়াং বমের ছেলে লাল রুয়াই বম (৫২), পাইন্দু এলাকার মৃত সাই ইয়াং বমের ছেলে লিয়ান লুয়াই থাং বম (২৪), লাল রাম লিয়ান বমের ছেলে গিলবার্ট বম (১৭)। নারী হলেন, সদর ইউপির বেথেল পাড়া এলাকার, আরিনহ্ বমের স্ত্রী আজিং বম (২০), আলিম বমের স্ত্রী লালসিং পার বম (৩০), তোলয়াং পুই বমের স্ত্রী ভান রিন কিম বম (৩৬), পালেন বমের স্ত্রী আতং বম (৩০), সিয়ান খুপ বমের মেয়ে আলমন বম (২২), তনখুয়াই বমের মেয়ে লাল মুন এং বম (১৯), মৃত পুনসাং বমের মেয়ে লাল নুন জির বম (৩৪), জিং আলহ বমের মেয়ে মেলরি বম (২৬), লম জুয়াল বমের মেয়ে লাল নুন বম (২৪), সাংলিয়ান বমের স্ত্রী নেম পেন বম (৩৮), ভানলাল দিক বমের স্ত্রী এলিজাবেত বম (৩০), লালতন লিয়ান বমের মেয়ে লাল ত্নাহাকিম বম (৩০), লালতন লিয়ান বমের মেয়ে পারঠা জোয়াল বম (১৯), মৃত চমনিন বমের মেয়ে জিং রোল এং বম (৩২), লালতন লিয়ান বমের মেয়ে লাল নুন কিম বম (২৫), লাল রুয়াই বমের মেয়ে টিনা বম (১৮), লাল নম সাং বমের মেয়ে লেরী বম (২৩), হ্লাং খুম বমের মেয়ে শিউলি বম (২১)।

            অন্যদিকে পুলিশের প্রেরিত তালিকার বাইরে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটক করা হয় জেলার সদর উপজেলার সুয়ালক ইউপি শ্যারণ পাড়া থেকে রোয়াংছড়ি ইউপির রৌনিন পাড়া এলাকার জিংচুন নুং বমের ছেলে ভানুনুন নুয়াম বম, অপর দুই গ্রেপ্তারকৃত থানছি সদর ইউপির সিমতাংপি পাড়া লাল মুন চম বমের ছেলে ও মেয়ে জেমিনিউ বম (২৬) ও আমে লনচেও বম (২২) (মহিলা)। যৌথ অভিযানে আরো আটক করা হয় থানছি সদর ইউপি টিএন্ডটি পাড়ার মো: ইউসুপের ছেলে গাড়ির ড্রাইভার মো: কফিল উদ্দিন সাগর (২৮), রুমা সোনালী ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা (ক্যাশিয়ার) লাল তন লিয়ান বম (৫৪)।

            অপরদিকে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটক করা হয় জেলার সদর উপজেলার সুয়ালক ইউপি শ্যারণ পাড়া থেকে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) স্থানীয় প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বম। চেওসিম বমের সাথে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। বান্দরবানের শ্যারণ পাড়ার মৃত রোয়াল খুব বমের ছেলে চেওসিম বম। ২০১৪-১৫ খ্রি: বম, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খিয়ং ও খুমী ৬ টি পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী নিয়ে কেএনডিও নামে স্যোশাল অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়। চেওসিম বম কেএনএফ সৃষ্টির প্রথম দিকের কেএনডিও এর চেয়ারম্যান। কেএনডিও থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক দল কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ গঠন করা হয়। কেএনএফ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মী (কেএনএ) গঠন করে। ২০২২ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি এ চেওসিম বমের বাসায় বসে আর্থিক কালেকশনগুলো করা হত। এ ছাড়া সশস্ত্র শাখা কেএনএ নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের তার ও তার আত্মীয় স্বজনদের বাসায় রাখার সমন্বয় দায়িত্ব পালন করতেন স্থানীয় প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বম।

            বান্দরবান র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ জানান, চেওসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যদের অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের সুয়ালকে অভিযান পরিচালনাকালে তার বাসা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়। তার পাকা একতলা বিল্ডিংয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া না গেলে তার বাসায় থাকা ছোট একটি স্টিলের স্ট্রাকচার খুঁজে পাই। তার পরিবারের সদস্যরা সেটা খুলতে অসহযোগিতা করলে এটি খুলে তার ভেতরে ছোট একটি কুঠুরি ছিল সেখান থেকে তাকে আটক করতে সমর্থ হই।

            বান্দরবানের রুমা ও থানছি ব্যাংক ডাকাতি ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৮ মামলা: বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি, টাকা লুট, অস্ত্র ছিনতাই ও ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় ৮ টি মামলা করা হয়েছে। এ ব্যাংক ডাকাতি ঘটনায় রুমায় ৪ টি ও থানচিতে ৪ টি মোট ৮ টি মামলায় অজ্ঞাত নামা প্রায় ১৮০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। এ মামলায় কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সদস্যের নাম উল্লেখ নেই। বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া মামলা সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞতি থেকে কেএনএফ সদস্যের নাম না থাকার তথ্যটি জানা যায়।

            মামলায় বিবরণে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৮ টা ১৫ মিনিটে রুমা থানাধীন সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০ থেকে ১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সোনালী ব্যাংক এর উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) হতে পূর্ব পরিকল্পিত বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণ কালে সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে ২ টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮ টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ৪ টি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ ছিনতাই ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো: নিজাম উদ্দিন কে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারি দলের সদস্যরা এ রাতে ৯ টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলি ও ম্যানেজার মো: নেজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেল পাড়ার দিকে চলে যায়। মামলায় আরো বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল আনুমানিক ১২ টা ৪০ মিনিটে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে লুটপাট চালায়। এসময় ১৫ হতে ২০ লক্ষ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফায়ার করে ত্রাস সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহান পাড়ার পাহাড়ী এলাকার দিয়ে চলে যায়।

            যৌথ অভিযানে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার: বান্দরবানে রুমা উপজেলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সোমবার (৮ এপ্রিল) পৌনে ৪ টায় রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেএম আরাফাত আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র মধ্যে রয়েছে ৭ টি দেশি বন্দুক, ২০টি রাউন্ড গুলি, ল্যাপটপ, কেএনএফ ব্যবহার পোষাক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। এ উদ্ধার হওয়া অস্ত্র তালিকায় ছিনতাই হওয়া ১৪ টি অস্ত্র উল্লেখ নেই।

            রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেএম আরাফাত আমিন জানান, রুমার বেথেল পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৭ টি দেশি বন্দুক, ২০টি রাউন্ড গুলি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুই জোড়া বুট, ১ টি ছুরি, কেএনএফ ব্যবহার পোষাক ও বিভিন্ন সরঞ্জাসহ দুই জনকে আটক করা হয়েছে।

            গত মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) রাত ৯ টায় বান্দরবানের রুমা উপজেলায় রুমা সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় লুট করে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নিয়ে যায় আনসার ও পুলিশের ১৪ টি অস্ত্র। অপহরণ করে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। এর পরের দিন বুধবার (০৩ এপ্রিল) দুপুর ১২:৩০ টা সময় বান্দরবানে থানছি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে অনুমানিক ১৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) সকালে বান্দরবানে থানচি উপজেলায় আলীকদমের ২৬ কিলো মিটার এলাকায় সামরিক চৌকিতে হামলা করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সামরিক চৌকিতে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নিরাপত্তা বাহিনী। এর পরের দিন শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) রাতে থানছি উপজেলায় থানছি থানায় হামলা করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ হামলা ঘটনায় কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ করে নিরাপদে পালিয়ে যায় কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

খবরটি 643 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন