ব্রেকিং নিউজ:

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এ কর্মশালা আয়োজন করে যৌথভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়। শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯ টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট অডিটরিয়ামে এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লা। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট পরিচালক মংনু চিং মারমা।

            এ কর্মশালায় চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব চাকমা উনর নুয়ো ভাত হানা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক সন্তোষ চাকমা। প্রবন্ধকার তথ্য থেকে জানা যায়, চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব চাকমা উনর নুয়ো ভাত হানা একটি সামাজিক উৎসব। কৃষি ভিত্তিক সমাজে সব দেশে ও সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতিতে নবান্ন উৎসব পালনের প্রথা প্রচলিত রয়েছে। ধারণা করা হয় এ ধরনের প্রচলিত সংস্কৃতি ও প্রথা থেকে কৃষি ভিত্তিক জমিতে ফসল উৎপাদন ও জুম চাষ সংস্কৃতির মাধ্যেমে চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নবান্ন উৎসব নুয়ো ভাত হানা প্রচলন হয়েছে। চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকসংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নুয়ো ভাত হানা নবান্ন উৎসবে অন্নপূর্ণা বা মালক্ষী মা ফসলের দেবীকে পূজা অর্চনা করা হয়। মালক্ষী মা দেবীকে সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী গণ্য করা হয়।

            ধান ফাং: কৃষি জমি ও জুম চাষের ফসল পাকা ধান সংগ্রহের সময় হলে শুভ দিন দেখে ঈশান কোন থেকে নতুন পাকা ধানের কয়েক গোজা কেটে ধান ফাং করে ঘরের মূল খুটির সাথে বেধে রাখা হয়। এ ধানের গোজা পরবর্তী বছর নতুন ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত এভাবে রাখা হয়। ফাং করা নতুন পাকা ধানের গোজা পরিবারের এক নারী হাইলুং দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর শুরূ হয় জমি ও জুমের ফসল সংগ্রহ নতুন পাকা ধান কাটা। প্রাকৃতিক খারাপ আবহাওয়া, সময় স্বল্পতা ও জনবলের অভাব হলে মালেয়ে ডেকে নতুন পাকা ধান কাটা সহযোগিতা নেয়া হয়। এ সময় নুতুন পাকা ধানের গন্ধে মনের মধ্যে আনন্দে ভরে ওঠে। ধান কাটা শেষ হলে সব ধান বাড়ির ধান সড়ংঙে রেখে দেয়া হয়। এ রীতি বহু প্রচীন কাল থেকে প্রচলন ছিল।

            নবান্ন উৎসব নুয়ো ভাত হানা: আগের বছরের পরাতন ধান শেষ হলে অথবা নতুন ধানের চালের ভাত খাওয়া শুরু করতে পারিবারের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকতায় আয়োজন করা হয়। পরিবারের পরিকল্পনায় যে কোন সময় আমন্ত্রীত অতিথি, আত্নীয় স্বজন, পাড়ার প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে নতুন ধানের চালের ভাত খাওয়া উদ্বোধনের আয়োজন করা হলো নবান্ন উৎসব নুয়ো ভাত হানা। চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব চাকমা উনর নুয়ো ভাত হানা আয়োজনে জমি ও জুমের উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্য, পিঠা ও নবান্ন নুয়ো ভাত পরিবেশন করা হয়। আমন্ত্রীত অতিথি, পাড়ার প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজন নবান্ন উৎসবে নুয়ো ভাত হানায় অংশগ্রহন করে আনন্দ উপভোগ করে। এ দিনে উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্য ও নবান্ন নুয়ো ভাত পৌয় দিয়ে মালক্ষী মা দেবীকে চৌলতং ভিতরে পূজা করা হয়। মালক্ষী মা দেবীকে পূজা দেয়া নবান্ন নুয়ো ভাত পৌয়ের কোন খাদ্য পরিবারের মেয়েরা খেতে পারবেনা। লোকবিশ্বাস রয়েছে মালক্ষী মা পূজার নবান্ন নুয়ো ভাত পৌয়ের কোন খাদ্য গ্রহন করলে পরিবারের মেয়েরা অন্যত্র বিবাহ হলে তাদের সাথে মালক্ষী মা চলে যাবে। ধারণা করা হয় কৃষি জমি ও জুম চাষের শুরু হওয়ার পর সামাজিক রীতি নীতি ও লোকবিশ্বাস থেকে চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব চাকমা উনর নুয়ো ভাত হানা প্রথা প্রচলন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর নানা আয়োজনের মধ্যে চাকমা সমাজে নবান্ন উৎসব চাকমা উনর নুয়ো ভাত হানা এ সামাজিক উৎসব পালন করে থাকে চাকমা জাতিগোষ্ঠী।

            এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং ম্রো। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য সত্যহা পাঞ্জি ত্রিপুরা, বান্দরবান সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক দীপন চাকমা ও প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু। এ কর্মশালায় রিসোর্স পার্সন উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।

খবরটি 690 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন