ব্রেকিং নিউজ:

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে রুমা উপজেলায় কেনএনএফ সাথে শান্তির সংলাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। অনেক প্রচেষ্টার পর অবশেষে রুমা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক আয়োজন করা হয়। শান্তি প্রক্রিয়া বৈঠককে ঘিরে মুনলাই পাড়া এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় রুমা উপজেলায় মুনলাই পাড়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথম সরাসরি শান্তি প্রক্রিয়া বৈঠক হয়েছে। এ প্রথম বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে ৯ সদস্যের নেতৃত্বে ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। এ সময় সাথে ছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য সচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র ও জেলা পরিষদের সমদ্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, আইনজীবী বাসিংথুয়াই মারমা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, কমিটির সদস্য ও উন্নয়ন কর্মী লেলুং খুমী, কমিটির সদস্য ও উন্নয়ন কর্মী কৃপা ত্রিপুরা, সরকারি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহ আলম। অপর দিকে কেএনএফ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি লাল এং লিয়ান বম দলের ৫ সদস্যের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ বৈঠকে সাথে ছিলেন কেএনএফ সংগঠনের প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা চেওসিম বম, দুর্নীবার পাড়ার কার্বারি রুয়াল্লিন বম, সুংসং পাড়ার অলীভ বম ও ফারুক পাড়ার লিয়ানমিন বম। এর আগে তিন বার ভার্চুয়ালি অনলাইন বৈঠকে  ও এবারে সরাসরি বৈঠকে অংশগ্রহন করেনাই কেনএনএফ প্রধান। পরবর্তী বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের প্রধান নাথান বম।

            শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সূত্রে জানায়, কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর লক্ষ্যে এ শান্তির সংলাপ প্রস্তাব দেয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। কমিটির উদ্যোগে এ পর্যন্ত কয়েক বার কেএনএফ নেতাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যেমে অনলাইনে বৈঠকের করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে এবার প্রথম সরাসরি বৈঠকের আয়োজন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চার সিদ্ধান্তে ঐক্যমত্য হয়। বিষয়গুলো হল (১) সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী বজায় রাখতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে কেএনএফ কোন শসস্ত্র তৎপরতা বিরতি রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। (২) কুকি চিন সম্প্রদায়ভূক্ত উদ্ভাস্তু নিজ আবাসস্থলে ফেরার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পুনর্বাসন ব্যবস্থা গ্রহন করা। (৩) কেএনএফ পক্ষ থেকে কুকি চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যেন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য সহায়তা ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা। (৪) পরবর্তী সংলাপ উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তারিখ নির্ধারন করে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের পর কেএনএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও টিম লিডার লাল এং লিয়ান বম এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্যশৈহ্লা মারমা মধ্যে চার সিদ্ধান্তে ঐক্যমত্য বিষয়ে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়।

            কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ৯ জুন ২০২৩ খ্রি: পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর মূল কার্যক্রমের মধ্যে কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এবং কেএনএফ সংলাপের উদ্যোগ গ্রহন করা। অন্য আর একটি কাজ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর কারণে এলাকায় খাদ্য সংকটে খাদ্য সহায়তা ও পুনর্বাসন উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ কার্যক্রমের আওতায় গত ২২ জুন জেলা পরিষদ সভা কক্ষে আলোচনা সভায় মাধ্যেমে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে কর্ম পরিকল্পনা করেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। শান্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রমের মধ্যে গত ১৯ জুলাই, ৪ আগষ্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের ৪ সদস্য তিন বার ভার্চুয়ালি অনলাইনে বৈঠকে অংশগ্রহন করে। কমিটি সাথে কয়েক বার আলোচনায় প্রথম সরাসরি শান্তি প্রক্রিয়া বৈঠক করতে সম্মত হয় কেএনএফ। এবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সাথে প্রথম বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ও সশস্ত্র সংঘাট পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্মতি দিয়েছে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। কমিটির শান্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রমের সারা দিয়ে কুকিচীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও সশস্ত্র সংঘাট পরিহার করে শান্তির পথে হাঁটছে কেএনএফ।

            রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা ও বান্দরবানে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি উপজেলার দুর্গম এলাকায় সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে কেএনএফ। এ সময় কেএনএফ গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে। কেএনএফ ও শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে পাহাড়ে বিভিন্ন আস্তানা থেকে ৩৮ জন জঙ্গি ও কেএনএফ ১৭ সদস্যকে আটক করা হয়। এ অভিযানে কেএনএফ সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়।

খবরটি 624 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন