ব্রেকিং নিউজ:

ফিচার ডেস্ক: কিশোরগঞ্জ জেলায় সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বড়ইতলা নামক স্থানে এসে নামে। পরে তারা পার্শ্ববর্তী দামপাড়া গ্রামে গিয়ে চার থেকে পাঁচজন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রাণে বাঁচতে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের দামপাড়া, বীরদামপাড়া, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর, চিকনিরচরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে সভা হবে ডেকে বড়ইতলা নিয়ে যায়। সেখানে গেলে সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘরে লুটতরাজ, নারী নিপীড়ন ও অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় এক রাজাকার গুজব ছড়ায় যে গ্রামবাসী দুই পাকিস্তানি সৈনিককে মেরে ফেলেছে। এ গুজবের পর বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশের বড়ইতলা এলাকায় ধরে নিয়ে গিয়ে নিরীহ ৩৬৫ জনকে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

            বাংণাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বড়ইতলার গণহত্যার স্থল পরিদর্শন করেন। পরে বড়ইতলার নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ নগর’ রাখা হয়। শহীদদের স্মরণে সেখানে তখন একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। পরে ২০০০ সালে সরকারের সহযোগিতায় বড়ইতলা এলাকায় রেললাইনের পাশে ৬৬৭ বর্গফুট এলাকায় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বড়ইতলা হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা শত শত পরিবার এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের খবর রাখে না কেউ। এখনো মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও মর্যাদা।

            ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের বড়ইতলা নামক স্থানে ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর দিনটি বড়ইতলা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কিশোরগঞ্জবাসী।

খবরটি 733 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন