ব্রেকিং নিউজ:

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটির নেতারা এ যুদ্ধের নাম দিয়েছেন ‘অপরেশেন আল-আকসা ফ্লাড’। শনিবার ভোর রাত থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে অন্তত ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে এ দাবি করেছেন হামাসের হাইকমান্ড। আল আকসা মসজিদে হামলা এবং অবৈধ বসতি স্থাপনের জবাব দিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত কয়েক সপ্তাহ গাজা ও পশ্চিম তীর সীমান্তে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উত্তেজনা চলার পর শনিবারের এ রকেট হামলা শুরু করল হামাস। ভোররাতের দিকে হামাস রকেট হামলা শুরুর কিছুক্ষণ পর দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রকেট হামলার সময় যে সাইরেন বেজে উঠেছিল গাজায়, তার শব্দ ওই ভূখণ্ডের সীমান্ত থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে তেল আবিবে শোনা যাচ্ছিল। মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়া এবং নিজ বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ‘বোম্ব শেল্টারে’ আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

            অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) পক্ষে সেখানকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ত জানিয়েছে, এ হামলার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত আইডিএফ ইতোমধ্যে ময়দানে নেমেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগে ৩ হাজারের বেশি রকেট ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে। হ্যাং গ্লাইডার ও মোটরচালিত গ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ সময় মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে আরও কয়েক শ’ হামাস যোদ্ধা, শুরু হয় যুদ্ধ।

            এক বিবৃতিতে হামাস সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মোহাম্মেদ দেইফি বলেন, আমরা অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড শুরু করেছি। শনিবার ভোর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় ৫ হাজার রকটে ছুড়েছি। ইসরায়েলকে আমরা উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশপ্রেমিক সব ফিলিস্তিনিকে এ যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।

            তাৎক্ষণিক এক বার্তায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ত বলেন, আজ ভোরে রকেট হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করল হামাস। তা তাদের বিরাট একটি ভুল সিন্ধান্ত। আইডিএফ এ হামলার সমুচিত জবাব দেবে এবং এ যুদ্ধে ইসরায়েল জয়ী হবে।

            ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন, এখন ইসরায়েলে যুদ্ধ চলছে। আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি, কোনো অভিযান নয়, কোনো উস্কানি নয়, যুদ্ধ। ইসরায়েল ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক ও আকস্মিক হামলা চালিয়েছে হামাস। আমরা সকাল থেকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আছি। আমি নিরাপত্তা ব্যবস্থার সব প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রথমত যারা ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছি এ অপারেশন এ মুহূর্তে চলছে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে আমি রিজার্ভ সেনাদের জড়ো করা এবং শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি, যা শত্রুরা কখনো কল্পনা করেনি। শত্রুরা এমন মূল্য দেবে যা তারা ভাবতে পারেনি। আমি সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এখন যুদ্ধে আছি এবং আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হব। শনিবার ইসরায়েলিদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিয়ে এ কথা বলেছেন তিনি।

            ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছুড়ল হামাস: মারাত্মক ও আকস্মিক প্রথম হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে। হামাসের এ অভিযান শুরুর পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া গাজার সীমান্তে যে লোহার বেড়া রয়েছে সেখানে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই চলছে ইসরায়েলি সেনাদের।

            ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে নিহত ছাড়াল ১৩০০ জন: ইসরায়েলের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর গত ৩ দিনে ইসরায়েল ও গাজায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এ নিহতদের মধ্যে ৮ শতাধিক ইসরায়েলের এবং ৫৬০ জন ফিলিস্তিন। ইসরায়েলের নাগরিকদের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি দেশের লোকজন রয়েছেন নিহতের এ তালিকায়। অন্তত ১০ টি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক হত্যা ও অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ার‌ল্যান্ড, মেক্সিকো, ব্রাজিল, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং ইউক্রেন। যুদ্ধে ইতোমধ্যে নিজেদের ১০ জন নাগরিক নিহত হয়েছে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। থাইল্যান্ডের সরকার জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অন্তত ১২ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছে এবং অপহরণের শিকার হয়েছে আরও ১১ জন।

            গত শনিবার ভোররাতে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। এর পর থেকে ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনের যুদ্ধ চলছে হামলা ও পালটা হামলা।

সূত্র: আল আরাবিয়া, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, এসএমডব্লিউ

খবরটি 657 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন