জবভ: প্রকাশের জন্য সংবাদ উধঃব: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে পানছড়িতে পিসিপি’র আলোচনা সভা
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে“শাসক গোষ্ঠীর সেবা দাস তৈরীর ঔপনিবেশিক শিক্ষা এবং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা”শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), পানছড়ি উপজেলা শাখা।
আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় পিসিপির পানছড়ি উপজেলা শাখার সহসভাপতি পরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সদস্য দেবাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক হরিকমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি রিপন ত্রিপুরা, পার্বত্য নারীসংঘের পানছড়ি উপজেলার সভাপতি মিনতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি মিঠুন চাকমা।
সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক হরিকমল ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা চরম বৈষম্য, শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দেখতে পাই। এখানে প্রকৃত সংগ্রামী ইতিহাসের ধারণা তেমন দেওয়া হয়না। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে সেগুলো আমাদের পাহাড়ের ছেলে-মেয়েরা পাঠ্যপুস্তকে পড়তে পারেনা। তিনি বলেন, আমাদের শুধু প্রতিষ্ঠানের পাঠ্য বই পড়লে হবেনা। এর বাইরে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা যে এক সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে মুঘল, ব্রিটিশদের সাথে বীরত্বপূর্ণ লড়াই সংগ্রাম করেছেন সেই ইতিহাস জেনে আমাদের ছাত্র সমাজকে লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়কের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকার বর্তমানে কোটি কোটি টাকা খবচ করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে পাহাড়ি দের ঘিরে ফেলছে। এতে পাহাড়িরা আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। কিন্তু সরকার যেভাবে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে তোড়জোর করছে, সে ভাবে এ অঞ্চলের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করছে না। যার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনকে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু বরণ করতে দেখি। মাধ্যমিক স্তর থেকে অর্ধেক শিক্ষার্থীকে ঝরে পড়তে দেখি।
ছাত্র নেতা মিঠুন চাকমা বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃক ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা সঠিক পাঠদান ও সুশিক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা কোথাও নিরাপদ নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারী জারি রাখা হয়েছে শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। রাঙামাটির লংগদুতে আব্দুর রহিম নামের এক প্রধান শিক্ষক কর্তৃক নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সম্প্রতি কাপ্তাইয়ে সেনাসদস্য দ্বারা এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে নান্যাচরে কলেজ ছাত্র রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে চুপ করে বসে থাকলে হবেনা। ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি শাসন-শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল সেভাবে আমাদেরও রুখে দাঁড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
নারী নেত্রী মিনতি চাকমা বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষিত হলে হবেনা। তিনি আরো বলেন, আমাদের পাহাড়ি নারীরা-ছাত্রীরা কোথাও নিরাপদ নয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটর কাপ্তাইয়ে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে একদল সেনা সদস্য দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি। তিনি বলেন, ধর্ষণসহ সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও সোচ্চার হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে, আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
যুব নেতা রিপন ত্রিপুরা বলেন, শিক্ষক নিয়োগের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা পরিষদগুলোর মাধ্যমে বাণিজ্য চলছে। ছাত্র-যুব সমাজকে আন্দোলন বিমুখ করার লক্ষ্যে নানা রকমের নেশাদ্রব্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নতুন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি শাসক গোষ্ঠির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য ছাত্র-যুব সমাজকে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বার্তা প্রেরক
সুজয় চাকমা
সদস্য
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
পানছড়ি উপজেলা শাখা।